আতঙ্ক কেটেছে গোপালগঞ্জবাসীর, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান
জেলায় বর্তমান অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় জরুরি সভা করেছে আওয়ামী লীগ। আজ রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে শহরের ব্যাংকপাড়াস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজম জেলাবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন-সংগ্রামের আহ্বান জানান। সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ না ভাবার আহ্বান জানিয়ে তাদের কাজে সহায়তা করারও অনুরোধ করেন তিনি।
সকলকে সাবধান করে দিয়ে আজম বলেন, এর পরে কোন নেতা বা কর্মী যদি বিশৃঙ্খলা করেন তাহলে আওয়ামী লীগ তার দায় ভার নেবে না। অন্যান্য বছর যেভাবে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করা হয়েছে, আগামী শোক দিবসের অনুষ্ঠানও সেভাবেই পালন করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানান। আন্দোলনে কোন রকম দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন না করার অনুরোধও করেন তিনি।
গত কয়দিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হলেও শনিবার (১০ আগস্ট) কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, যেটা কোনভাবে মুজিব আদর্শের সৈনিকদের কাম্য নয়। মনে রাখবেন রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের শত্রু না। তাদের প্রতি কোন প্রকার শক্তি প্রদর্শন করা যাবে না। গতকাল সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল প্রকার ঘটনার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ভবিষ্যতে এরকম কোন অঘটন ঘটলে তার দায়িত্ব জেলা আওয়ামী লীগ বহন করবে না বলেও জানানো হয়। যারা বিশৃঙ্খলা করবে তাদেরকে দুষ্কৃতকারী হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথাও বলা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভালো আছেন। আমাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে, তিনিও এই নির্দেশনা দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে যাতে কোনরকম বিশৃঙ্খলা না হয়, সেই জন্য সকলের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ এবং দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকাল শনিবার বিকেলে (১০ আগস্ট) ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর অবরোধকালে সেনাবাহিনীর টহল টিমের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে গাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে। এ ঘটনায় ৬ সেনা সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় সেনাবাহিনীর দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। পরে একটি রাইফেল গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এবং অপর রাইফেলটি আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর প্রায় ২৫০ সেনা সদস্য গোপালগঞ্জে আনা হয়। অনেকে আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটান। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব রটনা শুরু হলে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
তবে আজ (১১ আগস্ট) রোববার সকালে আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক হয় জেলার পরিস্থিতি। ওই মহাসড়ক দিয়ে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। জেলা শহরে খোলা থাকে অফিস, আদালত, স্কুল কলেজসহ সকল ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে বিকেল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর টহল চোখে পড়েনি।