দুধ দিয়ে গোসল করে আওয়ামী লীগনেতার পদত্যাগ
দুধ দিয়ে গোসল করে আওয়ামী লীগের এক নেতা দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাঁর নাম কামরুজ্জামান মাসুদ। তিনি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, আজ শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে কামরুজ্জামান মাসুদ তাঁর বাসার ছাদে দুধ দিয়ে গোসল করেন। পাশে থাকা আরেকজন ব্যক্তি মগ দিয়ে তাঁর মাথায় দুধ ঢালছেন। এমন ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় স্থানীয়দের সামনে কামরুজ্জামান মাসুদ বলেন, আমি জনগণের ভোটে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি দলীয় চেয়ারম্যান নই। আমি কখনোই চাইনি ছাত্র-জনতার বিপক্ষে থাকতে। গত ৪ আগস্ট দেবিদ্বারে কী হবে তা আমি জানতাম না। আমাকে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ভুল বুঝিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গেছে। তারা আমাকে বলেছে, বাংলাদেশে যে সকাল ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শোক প্রকাশ করতে দেবিদ্বার স্বাধীনতা চত্বরে শোক র্যালি ও শোক সভা করা হবে। এজন্য গিয়েছি। আমি গিয়ে যখন দেখলাম ছাত্র-জনতার সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে। তখন আমি বাড়ি আসতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে আসতে দেয়নি। আমি দুই গ্রুপের মাঝখানে পরে গিয়েছিলাম। পরে আমার জীবন বাঁচাতে সংঘর্ষকারীদের কথা শুনতে হয়েছে।
এর আগে কামরুজ্জামান মাসুদ সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি ফতেহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি আমার এই ফতেহাবাদ ইউনিয়নবাসীর পক্ষে থাকার। তারা আমাকে বিপুল ভোটের বিজয়ী করেছেন। দীর্ঘদিন আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে মামলা-হামলা ছাড়া কিছুই পাইনি। সব কিছু থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছি। আমি এই ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছি কিন্তু তারা আমাকে দেয়নি। সব সময় একই দলের অন্য নেতাকর্মীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছি। আমি স্বেচ্ছায় অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৫ আগস্ট কামরুজ্জামান মাসুদ ইটের টুকরো ও হাতে লাঠি নিয়ে ছাত্রদের দিকে ছুড়ে মারছেন। ছাত্রদেরকে যারা মারধর করছেন তাদের সাথে আছেন।
ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিল্লাল হোসেন ভুইয়া জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মাসুদ বেপরোয়া হয়ে পড়েন। কথায় কথায় চৌকিদার দিয়ে ডেকে এনে তাঁর বাড়িতে টর্চার সেলে নির্যাতন করতেন। নির্বাচনে কামরুজ্জামান যে ইশতিহার দিয়েছিলেন তা তিনি পালন করতে পারেননি। এ নিয়েও ইউনিয়নের মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাজী আরিফ জানান, এমন কোন অপরাধ নাই যা তিনি করেননি। গ্রামের সালিশ বৈঠকে দুপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতেন। মামলা হামলা দিয়ে বহু মানুষকে নাজেহাল করেছেন। ইউনিয়নের মানুষজন তাঁর নির্যাতনের শিকার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কামরুজ্জামান মাসুদের নম্বরে একাধিকবার ফোন কল করলে তিনি তা রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।