বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ পৃথক হলেও বিচার বিভাগে চলছে দ্বৈত শাসন। এ কারণে বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। বিচার বিভাগ পৃথক সচিবালয়ে না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’
আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে প্রায় দুই হাজার বিচারকের উপস্থিতিতে নিজের অভিভাষণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচারকদের বদলি এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়নের নীতিমালা করা হবে। এখনই সময় পৃথক সচিবালয়ে গঠনের। না হয়, মানুষ বিচার বিভাগের সুফল পাবে না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পৃথকভাবে সচিবালয়ে তৈরি করে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক বাজেট তৈরি করতে হবে। অন্য সার্ভিসের সঙ্গে বিচার বিভাগের বেতন, সুযোগসুবিধায় যে বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসন করতে হবে। বিচার বিভাগে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য কমিশন নিয়োগ করতে হবে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করছি। জেলা জজ ও বিচারকদের দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হলে এটি তার সার্ভিসে ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য করা হবে। কারণ বিচার বিভাগে কারও ব্যক্তির দুর্নীতি পুরো বিচার বিভাগের দুর্নাম হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন শাখায় দুর্নীতি-অনিয়ম ছেয়ে গেছে৷ এটি এখন আর বরদাশত করা হবে না।’
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস। যার প্রতিফলন হিসেবে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিগত সময় বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিচার বিভাগের দুর্নাম করা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদেরকে কঠিন সময়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিদ্যমান বিচার বিভাগের স্বচ্ছতার জন্য মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে বিচারকদের গাড়ি, বাসস্থান ও এজলাস নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘৪২ লাখ মামলার জট রয়েছে। মুদ্রার ওই পিঠে রয়েছে বিচারক সংকট। মাত্র দুই হাজার বিচারক দিয়ে এটি সম্ভব নয়। দক্ষ জনবল নিয়োগ জরুরি।’
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া সারা দেশ থেকে আগত বিচারকদের উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট হয়ে উঠে মিলনমেলা।