বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ময়মনসিংহে চাঁদা দাবি, সতর্ক থাকার আহ্বান
চাঁদার দাবিতে ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দমোহন কলেজে চিঠি দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজটির অধ্যক্ষ এ ধরনের একটি চিঠি এনটিভি অনলাইনকে দিয়েছেন। সেই চিঠিটি ‘মাদক প্রতিরোধ প্রয়াস’ নামে একটি সংগঠনের নামে পাঠানো হয়েছে। যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কলুষিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সমন্বয়কেরা। আবার চিঠিটি যার নাম ও স্বাক্ষরে পাঠানো হয়েছে, তিনি বলছেন—এই সংগঠনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি প্যাডে যে নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, সেই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, চিঠির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
কলেজ অধ্যক্ষকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য তাদের ভবনটিকে তৈরি করে দিতে হবে। কারণ, ছাত্র আন্দোলনের সময় মাদক প্রতিরোধ প্রয়াস ভবনে পুলিশ স্পোর্টিং ক্লাবের সাইনবোর্ড থাকায় সন্ত্রাসীরা কার্যালয়টি লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। সে সময় ভবনের ছয়টি টেবিল, ৩০টি চেয়ার, আটটি ফ্যান, টেলিভিশন, ছয়টি থাই জানালা, দুটি কাঠের দরজা নিয়ে গেছে। দোতলার সিলিং, ফ্লোরমেট, বিদুৎ লাইন পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনটি বেসিন ও নানা উপকরণ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তাই মাদক-দুর্নীতিবিরোধী কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ভবনটি প্রস্তুত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাই প্রয়াস ভবনটি সচল করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে আপনাকে অনুরোধ করছি।
চিঠির সঙ্গে একটি কোটেশন দেওয়া হয়েছে। ১৮ জনের বসার উপযোগী একটি কনফারেন্স টেবিল, ভিজিটরস চেয়ার ক্রয় বাবদ এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকার একটি ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।
চিঠিটি ‘মাদক প্রতিরোধ প্রয়াস’-এর কি না তা জানতে সেখানে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটির মুঠোফোনে (০১৭১১…..৩৪) যোগাযোগ করা হয়। রনি মিয়া নামে একজন কল রিসিভ করেন। পরিচয়ে জানা যায়, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি। তার দাবি, চিঠির বিষয়ে আগে কিছুই জানতেন না। আজ সকালে বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন। পরে এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট জানেন।
রনি মিয়া জানান, তিনি শিক্ষকতা পেশায় আছেন। মাদক প্রতিরোধ প্রয়াসের সভাপতি আফজালুর রহমান ভূঁইয়া তার সরাসরি শিক্ষক। তিনি (সভাপতি) এই সংগঠনে তাকে সেক্রেটারি হিসেবে রেখেছেন।
চিঠিতে নিজের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহারের বিষয়ে রনি মিয়া বলেন, চিঠির বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলবেন। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
চিঠিটি আসলেই সংগঠন থেকে দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে কল করা হয় সভাপতি আফজালুর রহমান ভূঁইয়াকে। তিনি দাবি করেন, সংগঠনটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকেই আছেন। তারাই চিঠিটি ইস্যু করেছে। মাদক প্রতিরোধ প্রয়াস সংগঠনের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক ইমন সরকার চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। যদিও সেখানে চাঁদা দাবি করা হয়নি। এতদিন সংগঠনটি পুলিশের দখলে ছিল। আন্দোলনের সময় সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতির কথা উল্লেখ করে এই চিঠিতে সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে। এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ সেটি দেবে কি দেবে না, দিতে পারবে কি পারবে না–সেটি একান্তই তাদের বিষয়। জোরপূর্বক কিছু দাবি করা হয়নি।
ময়মনসিংহের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুল ইসলাম ও গোকুল সুত্রধর মানিক বলেন, আমরা রাজপথের সৈনিক। আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, নিজেদের আরাম-আয়েশের জন্য নয়। আমরা দেশটাকে বৈষম্যহীনভাবে গড়তে চাই।
সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে সমন্বয়কেরা আরও বলেন, আমাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ এরকম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা এই প্রয়াস নামে সংগঠনের এরূপ কাজের নিন্দা জানাই এবং এরকম কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এমন মন্তব্য আফজালুর রহমানকে জানানো হলে তিনি এবার ছাত্র সমন্বয়কদের কথা এড়িয়ে যান। এমনকি, ইমন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কি না, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। পরে চিঠির বিষয়ে জানতে ইমন সরকারকে তার মুঠোফোনে (০১৯২৩….০৭) যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আফজাল স্যারের সঙ্গে গত ৫ আগস্টের পর আমার বন্ধুর মাধ্যমে পরিচিত হই এবং তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের বিষয়ে জানতে পরি। এর আগে বা পরে এই সংগঠনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সেখানে প্রশিক্ষণবিষয়ক সমন্বয়ক হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ইমন আরও বলেন, এমন ঘটনায় আমি বিব্রত বোধ করছি। এমন কোনো বিষয়ের মুখোমুখি কখনও আমাকে হতে হয়নি। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নই। এনজিওতে কাজ করি। বেতন পাই, ভাত খাই। এখন আফজাল সাহেব ঘরে বসে যদি আমার নামে চিঠি চালিয়ে দেন, তাহলে তার দায় আমার নয়। স্বাক্ষরটিও তার নয় বলে দাবি করেন ইমন।
আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ বলেন, যেদিন চিঠিটি আসে, সেদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে কিছু ছেলে এই চিঠিটি রেখে গিয়েছিল। এরপর একদিন ওই সংগঠনের নামে আমার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তারপর কয়েকজন ছেলে আমার কাছে এসেছিল। তারা আমার কাছে টাকা চেয়েছে। তবে, যেহেতু সরকারি কলেজে এমন কোনো তহবিল থাকে না। সেটি আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি। পরে তারা সেদিন আর কোনো চাপাচাপি করেনি।