জিয়া কলোনির ভূমিহীনদের উচ্ছেদ অভিযান বিক্ষোভে বন্ধ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসকারী জিয়া কলোনির ভূমিহীন ১৩৬ পরিবারকে ভেকু নিয়ে উচ্ছেদ করতে আসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
বেড়িবাঁধের উপর রাস্তা নির্মাণের ফলে এই পরিবারগুলো উচ্ছেদ হতে যাচ্ছে। পরিবারগুলোকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন করা হচ্ছে না। কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আজ উচ্ছেদ অভিযানে আসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
উচ্ছেদ আতঙ্কে ভূমিহীন পরিবারের একটি দল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে দেখা করে তাদের পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ না করার দাবি জানায়। ইউএনওর বাসভবনে এই আলোচনা চলাকালীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ভেকু নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে যায়।
এই পরিস্থিতিতে কলাপাড়ার ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম ফেসবুকে লিখেন যে, ‘জিয়া কলোনি সংলগ্ন ১৩৬ পরিবার উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণে উপজেলা প্রশাসন, কলাপাড়া কিংবা উপজেলা ভূমি অফিস, কলাপাড়া কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ১৩৬ পরিবারের থাকার জায়গা নিশ্চিত না করে কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে না মর্মে ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বিক্ষোভের সময় বক্তব্য দেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিনিধি ইব্রাহিম শিকারী, মো. ফোরকান হাওলাদার, মো. নুর হোসেন, আনোয়ার মিরা, মো. টিপু, মো. মনির হাওলাদার, হাসি বেগম প্রমুখ।
দুই দশক আগে তৎকালীন সরকার বাস্তুভিটাহীন হওয়ায় ভূমিহীন পরিবারগুলোকে বসবাসের জন্য ইটবাড়িয়া গ্রামে আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ঢালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে কলোনি করে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল। এরপর থেকে তারা বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল থেকে পায়রা বন্দর প্রশাসনিক ভবন হয়ে ঢাকা কুয়াকাটা আঞ্চলিক সড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিকল্প সড়ক হিসেবে পায়রা বন্দরের গেট থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পর্যস্ত বেড়িবাঁধের উপর রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা নির্মাণ করতে কলোনিসহ বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসকারী ১৩৬টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ফলে ভূমিহীন মুক্ত কলাপাড়ায় নতুন করে ১৩৬টি পরিবার ভূমিহীন হতে যাচ্ছে।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মো. ফোরকান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা বেড়িবাঁধের বাইরের দিকে বসবাস করার ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছাস এবং বর্ষাকালে জোয়ারভাটার পানিতে প্লাবিত হওয়া আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তার পরও মাছ ধরে, ইটভাটায় কাজ করে, নির্মাণ শ্রমিক এবং কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে টানাপড়নের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করে আসছি।’
আরেক সদস্য ইব্রাহিম শিকারী বলেন, ‘নিজের কোনো জমি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাস করে আসছি। এই জমির মালিক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, তাই আমাদের উচ্ছেদ করা হলেও কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন করা হবে না বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই পরিস্থিতিতে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয় হারালে আমাদের জীবন ধারণ সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। উচ্ছেদের পর আমরা কোথায় থাকব, কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
কলাপাড়া উপজেলার বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজার ৪২৩টি পরিবারকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। অন্য দিকে এই ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হলেও কোনো ধরনের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ অথবা সহযোগিতা করা হচ্ছে না।
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কলাপাড়া প্রেসক্লাব চত্বরে একটি বিশাল মানববন্ধন করে পুনর্বাসনের দাবি জানান। পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনের জন্য ইউএনওর কাছে আবেদন করেছে। ইউএনওর সঙ্গে বারবার আলোচনা করার পরও কোনো সমাধান হয়নি। কোন সমাধান না করেই তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।