মাদারীপুরে এক রাতে ২ কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি
মাদারীপুরে এক রাতের কয়েক ঘণ্টায় প্রায় দুই কোটি টাকার ইলিশ মাছ বেচা-কেনা হয়েছে। জেলা শহরের পুরানবাজার মাছের আড়ৎ, মস্তফাপুর মৎস্য ভাণ্ডার আর রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরে ইলিশ বেচার মহোৎসব চলে গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।
আগামী ২২ দিন ইলিশ কেনা-বেচা ও বাজারজাত বন্ধ থাকায় এমনটি হয়েছে বলে জানান মাছ ব্যবসায়ীরা। আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় এসব মাছের আড়তে ইলিশ কেনার ধুম পড়েছিল। এক রাতে ইলিশ কেনায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো মাদারীপুর জেলা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের পুরানবাজার মাছের আড়তে ইলিশ মাছ নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতারাও আসতে শুরু করে ছোট-বড় সাইজের ইলিশ কিনতে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাছের আড়তে বাড়তে থাকে ক্রেতা। শেষ পর্যন্ত যেন তিল ধরনের ঠাঁই নেই। মাছ আর মানুষের মিলনমেলায় পুরো আড়ত মাছের মেলায় পরিণত হয়। তাই স্থানীয়রা একে ইলিশের মেলা বলে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের দাম বেশি ছিল বলে ক্রেতারা দাবি করেন।
পুরানবাজারে মাছ কিনতে আসা মাসুদ আকন্দ বলেন, ‘২২ দিন ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে না। তাই এখন মাছ কিনতে আসছি। তবে গতবার এক কেজি সাইজের ইলিশ ছিল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, এবার সেই ইলিশ এক হাজার ৯০০ টাকার উপরে। যে কারণে মাত্র ৫ কেজি ইলিশ কিনেছি। দাম কম হলে আরও বেশি কিনতাম। দাম আকাশচুম্বি।’
আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগে জানলে এ রাতের জন্য দেরি করতাম না। এখন যে দামে ইলিশ কিনলাম, তা আগের চেয়ে আরও বেশি। মানুষ হুজুগে মাছ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আমিও এসেছি, এখন দাম দেখে আর কিনলাম না। আগামীতে আর এই ভুল করব না।’
এ বছর ইলিশের সরবরাহও তুলনামূলক কম ছিল। যে কারণে বেশি দাম হাঁকিয়েছে ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দর ও রাজৈর বেপারীপাড়া মোড় ও মস্তফাপুর মৎস্য ভাণ্ডার কেন্দ্রে। সেখানেও শত শত মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। তবে দাম নিয়ে বিক্রেতাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ বছর পুরো জেলায় দুই কোটি টাকা বেশি ইলিশ বিক্রি হয়েছে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।
পুরানবাজারের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী সুজন বর্মণ বলেন, ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শনিবার রাত ১২টা থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। তাই যত ইলিশ সংগ্রহে ছিল সবই বিক্রি করে দিচ্ছি। কারণ মাছ মজুদও রাখা যাবে না। ক্রেতারাও আসছে, আমরাও বিক্রি করছি। তবে দাম গতবারের চেয়ে এবার একটু বেশি। যে কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলাও হয়।’
মাদারীপুর পুরানবাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছর নিষিদ্ধ সময়ের আগের রাতে ইলিশ মাছ বিক্রির ধুম পড়ে। সব মাছ ব্যবসায়ী সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার আগ পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি করেন। এ আড়তে প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। আর টেকেরহাটেও প্রায় এক কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। তবে আমরা নিষিদ্ধ সময়ে কোনো ইলিশ কেনাবেচা করি না।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এ বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। তাই সারা দেশের মতো মাদারীপুরেও ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় বন্ধ থাকবে। যদি কেউ এই আইন অমান্য করে তাহলে জেল-জরিমানা করার বিধান রয়েছে।