থানা হাজত থেকে ফেসবুক লাইভে ইউপি চেয়ারম্যান, জেলাজুড়ে তোলপাড়
পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ফেসবুকে লাইভে এসে বিতর্কের জন্ম দেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তার এমন কর্মকাণ্ডে এখন জেলাজুড়ে চলছে তোলপাড়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কর্তব্য ও পেশাদারত্ব নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নানা অপকর্ম ঢাকতে খুঁটির জোর ও নেপথ্যে মদদদাতা কারা।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে চিনি চোরাচালানি, নানা অপকর্ম ও অবৈধ বালু উত্তোলন চক্রের হোতা রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান ও অলিলা গ্রুপের এমডি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ছোট ভাই আতাউর রহমান (৪৬) গত শুক্রবার রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে আটক হন। এরপর এমন বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি নিজ এলাকায় নানা অপকর্ম করতেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা যায়, আতাউর রহমান আওয়ামী লীগের কোনো পদধারী বা সক্রিয় কর্মী না হয়েও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের চ্যালেঞ্জ করে ভাগিয়ে নেন দলীয় মনোনয়ন। অভিযোগ উঠে ওই সময়ে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। তখন ইউপি চেয়ারম্যানের ওই মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ ও বিতর্ক। শুরুতে এমন ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এখন আবারও তাকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কারণ গ্রেপ্তার অবস্থায় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন।
জানা যায় পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রেলক্রসিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে আতাউরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের প্রায় ১০ ঘণ্টা পর থানা হাজতে পুলিশ হেফাজতে থেকে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। এই ঘটনা জানাজানি হলে বিস্মিত হন জেলার সর্বস্তরের সচেতন মহল। পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক সবাই। চলছে বিতর্কিত এই ঘটনার নেপথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন আতাউরের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের সঙ্গে স্বৈচার সরকারের তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দহরম মহরম ও সখ্য ছিল সে সুবাধে এখনও প্রভাব দেখাচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। এ বিষয়ে র্যাব জানিয়েছে ওই দিন সকালেই তাকে গ্রেপ্তারের পর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আতাউর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে লাইভে এসে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়ে নিজেকে ওই মামলাগুলোতে নির্দোষ থাকার কথা জানিয়ে কামারচাক ইউনিয়নবাসীর কাছে দোয়া চান। তিনি নিজ ইউনিয়ন ছাড়েননি বলেই গ্রেপ্তার হন বলে জানান। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পর ওই ভিডিওটি আর তার আইডিতে পাওয়া যায়নি। আতাউর রহমানের আওয়ামী লীগে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গোপনসুত্রে ১০ অক্টোবর রাতে আতাউর রহমানের গুদাম থেকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ২৩১ বস্তা চিনি পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তার নামে রাজনগর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. মাহবুবুর রহমান র্যাবের হাতে ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর থানায় হস্তান্তরের কথা স্বীকার করে জানান, পুলিশ হেফাজতে ফেসবুক লাইভের বিষয়টি তার জনা নেই। ওই ভিডিওটি আগের হতে পারে। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন।
র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্ব্প্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা মুঠোফোন জানান গ্রেপ্তার করা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে গত শুক্রবার রাতেই মৌলভীবাজার মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।