নড়াইলের নবগঙ্গায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ
নড়াইল জেলার কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীতে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতাঅনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার বড়দিয়ার নবগঙ্গা নদীতে এ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলার খাশিয়াল ইউনিয়নের বড়দিয়া বাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী মেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এ নৌকাবাই প্রতিযোগিতা। নবগঙ্গা-মধুমতী নদীর মিলনস্থলে আজ বেলা ৩টার পর পরই শুরু হয় এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় পাঁচটি নৌকা। বাইচের নৌকাগুলোর নাম ভাই–বোন স্বপ্ন তরী, মা শীতলক্ষ্যা, জয় মা কালী, মোবাইল বাচাড়ি ও তুফান।
ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দেখতে এ সময় নদীর দুই পাড়ে ছিল হাজার হাজার দর্শনার্থী। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তারা নদীপাড়ে অবস্তান নেয়।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থেকে পরিবার নিয়ে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছেন ইজিবাইকচালক মো. সেলিম শেখ। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে নৌকাবাইচ দেখার অভ্যাস। এটি আমার খুবই প্রিয়। তাই পরিবার নিয়ে আনন্দ করার জন্য এখানে এসেছি।
মাগুরা থেকে আসা আব্দুল আলিম মোল্যা বলেন, ‘নৌকাবাইচ দেখতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে বাইচ হবে কি না।
নূর হোসেন বলেন, উৎসুক মানুষের এই ভিড় থেকে বোঝা যায়, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটুকু নিবিড়। স্থানীয় মানুষ, প্রশাসন ও সরকারকে বলতে চাই, প্রতিবছর নদীমাতৃক বাংলাদেশে যেখানেই নদী আছে, সেখানেই এমন প্রতিযোগিতামূলক নৌকাবাইচের আয়োজন করুন।
নবগঙ্গা নদী থেকে শুরু হয়ে দুই কিলোমিটার দূরে মধুমতী নদীতে গিয়ে শেষ হয় এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। চারটি ধাপে সম্পন্ন হওয়া এই প্রতিযোগিতা চলে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গোপালগঞ্জের মোবাইল বাচাড়ি, রানার্সআপ হয়েছে বাশুড়িয়ার তুফান, তৃতীয় হয়েছে জয় মা কালী।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম।
প্রধান অতিথি ছিলেন লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা আজরিন তন্বী।
খাশিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এম বরকত উল্লাহ বলেন, বড়দিয়ায় লক্ষ্মীপূজার মেলা দেড়শ বছর আগে থেকে আয়োজন হয়ে আসছে। মেলা উপলক্ষে যাত্রাগান, পালাগান, নৌকাবাইচসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তবে মাঝে দীর্ঘ ১৮ বছর শুধু মেলা হতো। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। আজ হাজার হাজার মানুষ এ নৌকাবাইচ উপভোগ করেছে। ভবিষ্যতে এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে এবং আরও অনেক ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এলাকার মানুষ যাতে সুস্থ ধারার সংস্কৃতিচর্চা করতে পারে এবং বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যাতে আমরা ধরে রাখতে পারি—সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।