বাংলাদেশে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের সুযোগ দেখছে ইইউ
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ কম, সেখানে এটি নিয়ে আরও কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
মিলার আরও বলেন, এদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সুবিধাগুলো সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অর্থায়নের বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে।
দূতাবাসে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘আমরা মনে করি, বায়ুর মান ও বায়ুদূষণ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে, যে বড় বিনিয়োগের কথা আমি বলতে চাই, তা হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে।’
২০২১ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে অংশীদার দেশগুলোর প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সুবিধা নিশ্চিত করতে টেকসই ও উচ্চমানের প্রকল্পে ৩০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের ব্যবস্থা করবে ইইউ।
মিলার বলেন, গত বছর তারা গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম আয়োজন করেছিলেন। নির্মাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেখান থেকে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো তহবিল সংগ্রহ করেছিল। এর মাধ্যমেই এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, স্থিতিশীল গ্রিড অবকাঠামো নির্মাণ এবং আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে।
মিলার আরও বলেন, ‘আমি মনে করি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারত্ব আরও এগিয়ে যেতে পারে। যেহেতু বস্ত্রখাতের পরিবেশগত উন্নয়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক কাজ করছি।’
উদাহরণ হিসেবে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, তারা বিশেষভাবে ইট শিল্পের কার্বন নিঃসরণ কমানোর ওপর কাজ করছেন। এটি ব্যাপক দূষণকারী খাত।
গ্লোবাল গেটওয়ে সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি নিরাপদ, উন্মুক্ত ও বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক তৈরির পথ।
উদাহরণস্বরূপ নেপালের কথা উল্লেখ করে মিলার বলেন, যখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে, তখন তারা এই ক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধান করতে চাইবে।
মিলার বলেন, ‘এই দেশের জলবায়ু ঝুঁকি অনেক বেশি হওয়ার কারণে আমাদের একইরকম এজেন্ডা রয়েছে এবং আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিলার বলেন, ব্রাসেলসে একটি বিশাল রাজনৈতিক রূপান্তর চলছে এবং আশা করছি নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাদের একটি নতুন কলেজ (ইউরোপীয় কমিশনের) গঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু সেই রাজনৈতিক রূপান্তর আমাদের জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চিত করবে।’
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একজন রাজনৈতিক 'রকস্টার', যার সর্বত্র প্রবেশাধিকার রয়েছে।তিনি বলেন, ‘তিনি যা বলেন,তা সবাই শোনেন এবং বাংলাদেশ তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। আমার উদ্দেশ্য হলো আমাদের অংশীদারত্বকে আরও গভীর করা।’
ইইউ মনে করে, জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের অভিন্ন বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের সব বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা আরও জোরদার হবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার সম্প্রতি পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং আসন্ন কপ-২৯ এর প্রস্তুতি নিয়ে মত বিনিময় করেন। এছাড়াও তৈরি পোশাক, চামড়া ও ইট খাতে পরিবেশগত ও সামাজিক কমপ্লায়েন্স নিয়ে আলোচনা হয়।
এসময় সংস্কার লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে ইইউ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং আমাদের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বিশ্বব্যাংকের মতে, জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশ অব্যাহতভাবে মারাত্মক ও ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকির সম্মুখীন এবং জোরালো পদক্ষেপ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের শক্তিশালী উন্নয়ন পরিক্রমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।