শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করেছিল : রিজভী
শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করেছিল অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ এ দেশ থেকে যেভাবে লুটপাট করেছে, দেশকে নতুনভাবে তৈরি করতে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বিদেশ থেকে যদি ১৮ লাখ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়, সেখান থেকে যদি ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়, তাহলে সেই দেশ উন্নত হবে কী করে।
আজ শনিবার (২ নভেম্বর) তেজগাঁও এলাকায় ডেঙ্গু সচেতনতায় লিফলেট বিতরণকালে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা এদেশের ব্যাংক লুটপাট করেছে, সেই লুটপাটের টাকা শেখ পরিবার লন্ডন-কানাডায় পাচার করেছে। সে লুটপাটের বিরুদ্ধে কেউ যাতে কথা বলতে না পারে, কোন বিরোধী দল যাতে টকশোতে বা বিভিন্ন জায়গায় কথা না বলতে পারে, সেজন্যে তিনি গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের পদ্ধতি চালু করেছিলেন। অর্থাৎ বিরোধী দল যদি তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিছিল করে কথা বলে তাহলে তার মান-সম্মান থাকবে না, এই কারণে প্রায় ৬০০ জন তরুণকে সে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করেছিল। কত লোককে গুম করেছিল, খুন করেছিল তার কোনো ইয়ত্তা নাই। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে পুলিশের বুটের তলায় পিষে দিয়ে এক মহাফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
রিজভী বলেন, যেখান থেকে টাকা মারা যাবে, লুট করা যাবে, লোক দেখানো ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল তিনি করেছেন। কারণ এগুলো থেকে কাঁচা টাকা যাতে লুট করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া যায় বা বিদেশে পাচার করা যায়। অথচ তিনি উন্নত হাসপাতাল প্রাইমারি স্কুল করেননি। যদি করতেন তাহলে হাসপাতালের বারান্দায় রোগী শুয়ে থাকত না। স্বৈরশাসকরা কখনো এগুলো করে না।
ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো লড়াই করেছে। অনেক বন্ধুর সাথী ছিল যারা এখন এখানে থাকতো; তাদেরকে শেখ হাসিনা খুন করেছে, গুম করেছে। কারো লাশ রাস্তায় পড়েছিল, কারো লাশ বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যায় পড়েছিল। যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে তাদের রক্তের স্রোতধারায় আমরা গণতন্ত্র পেয়েছি। সেই গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কাজ করে যেতে হবে।
রিজভী বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনেক নির্যাতন হামলা-মামলা সহ্য করেও গণতন্ত্রের জন্য হিমালয় পর্বতমালার মতো দাঁড়িয়ে থেকেছেন। শেখ হাসিনা বিন্দুমাত্র তাদেরকে দমাতে পারেনি। আমরা যারা গণতন্ত্রকামী, দেশে গণতন্ত্র চাই, তারা ছাত্রলীগের মতো কারো ওপর হামলা করবে না বা কারো কোনো কিছু দখল করবো না, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আমরা যদি ওই পথে যাই জনগণ কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেবে না। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরও বলেন, আমরা জানি অনেকেই এই ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল। তারাও লুটপাট করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের খুন গুম করেছে। ছাত্রদেরকে, মাসুম বাচ্চাদেরকে হত্যা করেছে। তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোন অপরাধীকে দেখলে যে মিছিলে হামলা করেছে, ছাত্রদেরকে মেরেছে, পুলিশের খবর দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। তেমনি যারা নিরীহ আওয়ামী লীগ আছে, যারা ছোট ব্যবসা করে, চাকরি করে কারো ক্ষতি করেনি; তাদের যেন ক্ষতি না হয়। তাদের ওপর যেন জুলুম নির্যাতন না হয়। যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে। কিন্তু বিচার করবে আদালত। তাদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশের। আমরা সে লাইনে যাব না। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস, কারো বাড়ি ঘরে হামলা করবো না। মানুষ যেন আমাদেরকে দেখে নিরাপদ মনে করে। আমরা শান্তির পথে যেখানে সকল রাজনৈতিক দল কথা বলবে, মিছিল করবে। এটাই তো গণতান্ত্রিক রীতি।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ডা. জাহিদুল কবির, যুবদল নেতা মেহেবুব মাসুম শান্ত, ডা. তৌহিদুল ইসলাম আউয়ালসহ নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।