রূপালী ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা : যেভাবে আটক তিন অস্ত্রধারী
ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকটিয়ায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতি করতে গিয়েছিল একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। যাদের তিনজন ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে কর্মকর্তাদের জিম্মি করেন। আর বাইরে পাহারায় ছিলেন আরও সাত থেকে আটজন। পরে পুলিশ র্যাব সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কৌশলে বিকেল পাঁচটার পর তাদের আত্মসমর্পণ করান। এর মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে আড়াই ঘণ্টার জিম্মিদশার।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে পুলিশের কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ডাকাতদলের তিন সদস্য ব্যাংকে প্রবেশ করেন। ব্যাংকে প্রবেশের পর অস্ত্রের মুখে সেখানে কর্মরত আট কর্মকর্তাকে জিম্মি করে ফেলা হয়। অল্পসময়ের মধ্যে ঘটনা জানাজানি হলে প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে র্যাব ঘটনাস্থলে যায়। ঘিরে ফেলা হয় ব্যাংকের আশপাশের এলাকা। এরপর সেখানে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বাইরে পাহারারত ডাকাত সদস্যরা। অন্যদিকে ভেতরে থাকা তিন সদস্যকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা চলছিল।
যে কৌশলে আত্মসমর্পণ করানো হয়
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভেতরে জিম্মিদশা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে ডাকাত সদস্যদের আত্মসমর্পণের জন্য বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছিল। কিন্তু তারা সাড়া দিচ্ছিলেন না। পরে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ডাকাতদলের সদস্যরা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ এবং ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তারা এ দুটি শর্ত দেন। এর মধ্যে তাদের নিরাপদে ভবন থেকে বের করে দিতে হবে এবং ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।
অভিযানে থাকা একটি সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংক থেকে টাকাও দেওয়া হয়। এ সময় ডাকাতদের কাছে থাকা তিনটি দেশীয় অস্ত্র পাশের ভবন দিয়ে বাইরে ফেলা হলে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। এরপর বিকেল পাঁচটার পর কৌশলে ওই ভবন থেকে তাদের বের করে মাইক্রোবাসযোগে সেফ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আত্মসমর্পণ করানো হয়। পরে ওই মাইক্রোবাস রওনা হয় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার দিকে। এতেই ডাকাতরা বুঝে যান তারা আটক হতে চলেছেন।
আটক তিন ডাকাত সদস্যকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন- শারাফাত, শিফাত ও নিরব। এদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ডাকাতির খবর পেয়ে স্থানীয়রা ব্যাংকের আশেপাশে অবস্থায় নিয়ে এলাকা ঘেরাও করে এবং ব্যাংকের মূল গেট তালাবদ্ধ করে দেন। ঘটনার সময় ব্যাংকের ম্যানেজার শেখর চন্দ্র সরকারি কাজে বাইরে ছিলেন। তখন ব্যাংকের সেকেন্ড ম্যানেজার মোহব্বতে হোসেন বাবু ওই ভবনের ম্যানেজার আব্দুল মাজেদ খানকে ফোন করে জানান, ব্যাংকের ভেতরে অস্ত্রসহ ৩ জন ডাকাত আছে। তারা গুলি করতে পারে। আপনারা গেট তালাবদ্ধ করে সরে যান। ভেতরে থাকা ডাকাতেরা ব্যাংক কর্মকর্তা এবং গ্রাহকদের জিম্মি করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। তখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ, র্যাব-১০ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ডাকাতদলের সদস্যরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কাছ থেকে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে থাকা জিম্মিদের মধ্যে কেউ হতাহত হননি। অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি।
সূত্র বলছে, ডাকাতদলের সদস্যরা মূলত ওই এলাকায় ছোটখাটো ছিনতাই কাজে জড়িত ছিলেন।
বর্তমানে ঘটনাস্থলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ, র্যাব-১০ এবং সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। এ ছাড়া বাকি ডাকাতদের ধরতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।