নরসিংদীতে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আহত শ্রমিকদল নেতার মৃত্যু
নরসিংদীর পাঁচদোনায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত শ্রমিকদল নেতা আলম মিয়া মারা গেছেন। আহত হওয়ার ৬ দিন পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার তিনি মারা যান।
আলম মিয়ার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমকিদল নেতারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। পরে স্থানীয় বিএনপিনেতা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধরা অবরোধ তুলে নেয়। মৃত আলম মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে নরসিংদীর পাঁচদোনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির পাঁচদোনা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি লাল মিয়া মেম্বার ও যুবদল নেতা মোসাদ্দেক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোসাদ্দেক ও তার লোকজন লাল মিয়া মেম্বারের লোকজনের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। হামলায় লাল মিয়া মেম্বারের লোকজনের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধসহ পাঁচজন আহত হয়। ওই ঘটনায় মাথায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত পাঁচদোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আলম মিয়াকে (৫৫) ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৬দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। আলম মিয়ার মৃত্যুর খবরে পুনরায় পাঁচদোনা মোড় অশান্ত হয়ে পড়ে। শ্রমিকদল নেতারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে আলম মিয়া হত্যায় জড়িত যুবদলনেতা মোসাদ্দেকের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। খবর পেয়ে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে আড়াইঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধরা। মারামারির ঘটনায় লাল মিয়া মেম্বারের ছেলে ইব্রাহিম মিয়া বাদী হয়ে মোসাদ্দেককে ১ নং আসামিসহ আরও ১৯ জনকে আসামি করে ১৯ ডিসেম্বর মধাবদী থানায় মামলা দায়ের করে।
উল্লেখ্য, নরসিংদীর পাঁচদোনায় আধিপত্য বিস্তার, এলাকার নিয়ন্ত্রণ, সিএনজি স্ট্যান্ড ও কলকারখানার ঝুট ব্যবসার দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে পাঁচদোনা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি লাল মিয়া ও স্থানীয় বিএনপিনেতা মোসাদ্দেক হোসেন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গত মঙ্গলবার রাতে লাল মিয়া মেম্বারের প্রবাসী ছেলেকে মারধর করে মোসাদ্দেক সমর্থকরা। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে লাল মিয়া সমর্থকরা মোসাদ্দেক সমর্থকদের ধাওয়া দেয়। ওই সময় দুই পক্ষর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ১ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩ জন আহত হয়। পরে লাল মিয়া সমর্থকরা বিচারের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। এরই জের ধরে আজ বুধবার দুপুরে মোসাদ্দেক হোসেন ও তার সমর্থকরা আবারও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে লাল মিয়া মেম্বারের সমর্থকরা এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষুব্ধরা ফুটপাতের বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এসময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ বিসয়ে কথা বলতে লাল মিয়া ও মোসাদ্দেক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিএনপির দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসাধীন আলমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।