চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, নিরাপত্তাহীনতা নিত্যসঙ্গী হয়ে চলছে : সিপিবি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘স্পিড মানি’র সাথে ‘রিস্ক মানি’ যুক্ত হয়ে দুর্নীতি ঘুষের পরিমাণ বেড়েছে। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, নিরাপত্তাহীনতা নিত্যসঙ্গী হয়ে চলছে। নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ‘গরিব থেকে বড়লোক’ সব মানুষের পকেট থেকে একই হারে ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে গরিব-মধ্যবিত্তের পকেট খালি হয়ে গেলেও বড় লোকের পকেট ঠিকই থাকছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্র অভিযাত্রা’র প্রথম দিনে ঢাকার পুরানা পল্টন মোড় থেকে বাহাদুর শাহ্ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা ও গণসংযোগে অংশ নেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অনেকদিন ধরে দেশে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা যায়নি। কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে অথচ ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। কৃষকের হাহাকার চলছে। আর শহরের বাজারে অধিকমূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বড়লোকের ওপরে প্রত্যক্ষ কর বাড়ছে না। ঋণ-খেলাপিদের টাকা আদায় না করে নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। লুটেরা সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে টাকা আদায়, পাচারের টাকা ফেরত আনা আর দুর্নীতিবাজদের জেলে ঢোকানোর খবর নেই।
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, স্বৈরাচারী শাসনামলের অন্যায় অব্যবস্থাপনা দূর হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে চলেছে। এ অবস্থার অবসানে সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের বিকল্প নেই। একমাত্র নীতিনিষ্ঠ বাম রাজনৈতিক শক্তি পারে ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে এই দুরবস্থার অবসান করে সব মানুষের গ্রহণযোগ্য দেশ গড়তে।
দেশের সাধারণ মানুষকে নীতিহীন রাজনীতিকে ‘না’ বলে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। এসময় তিনি সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।
রুহিন হোসেন প্রিন্স ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শত শত মানুষের রক্তদানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হলো, আজ ক্ষমতার দাপটে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাপট বেড়ে চলেছে। মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে দ্রুত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার নির্বাচনের কথা শুনলেই নানা ধরনের যুক্তি, কুযুক্তি হাজির করছেন ।
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, আমূল পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি নেই। এই আমূল পরিবর্তনের জন্য সংস্কার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তাই সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের কাল বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানান।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার পল্টন মোড়ের সিপিবি কার্যালয় থেকে আয়োজিত পদযাত্রা-গণসংযোগে সিপিবির কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, ক্বাফি রতন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কেন্দ্রীয় সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, কাজী রুহুল আমিন, আবিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জলি তালুকদার, জাহিদ হোসেন খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ইদ্রিস আলীসহ নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
নেতৃবৃন্দ সাধারণ মানুষের সাথে মতবিনিময় ও প্রচারপত্র বিতরণ করেন। এসময়ে নেতৃবৃন্দ সাধারণ মানুষ ও দেশবাসীকে তার নিজের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ দেশবাসীর উদ্দেশ্য বলেন, নিজে সচেতন না হলে সাধারণ মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে কোষ খাওয়া নেতাদের অভাব হবে না। নতুন নতুন নেতার জন্ম হবে। তাদের পকেট ভারি হবে। নতুন কর্তৃত্ববাদ স্বৈরাচারের জন্ম হবে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও সংঘটিত হতে হবে।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এই পদযাত্রা-গণসংযোগ চলছে। সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে গণতন্ত্র অভিযাত্রায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দেশের বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রা-গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম চট্টগ্রাম অঞ্চল, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স খুলনা অঞ্চল, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ গাইবান্ধাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় সিপিবি আয়োজিত পদযাত্রায় অংশ নেবেন। ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই গণতন্ত্রের অভিযাত্রা চলবে।