আগামী নির্বাচন আমাদের হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়ার নির্বাচন : মো. সানাউল্লাহ
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবকদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ, আমরা প্রতি ফোঁটা তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করবো ইনশাল্লাহ। আগামী নির্বাচন আমাদের হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়ার নির্বাচন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও নতুন ভোটারদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, এই কাজটি একটি বড় কাজ। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে, সমন্বয় করবে। কাজটি প্রতিপালন করবে মাঠ পর্যায়ের সবাই। লুঙ্গির উপরে প্যান্ট লাগানো যে চৌকিদার রয়েছে, তার থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পর্যন্ত সকলেই এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে একটি খারাপ নির্বাচন হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সম্মান ভুলুণ্ঠিত হয়। অতীতে যদি খারাপ নির্বাচন হয়ে থাকে তাহলে আমরা নিজেরাই আমাদেরকে প্রশ্ন করে উত্তর পেয়ে যাব যে, আমাদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন আছে, নাকি ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। যদি ভুলুণ্ঠিত হয়ে থাকে, তাহলে আগামী নির্বাচন আমাদের হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়ার নির্বাচন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি রংহীন, চেহারাহীন নির্বাচন কমিশন উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের কোন ফেভারিট নেই, আমাদের কোন পক্ষ নেই, আমরা একটাই পক্ষ, সুষ্ঠুতার পক্ষ, ন্যায়ের পক্ষ, মানুষের অধিকার মানুষের কাছে ফিরে দেওয়ার পক্ষ। মানুষ নির্বাচন করবে, যার ইচ্ছে সে প্রতিনিধি হবে। এটা নির্বাচন কমিশনের অফিসে হবে না, জেলা প্রশাসকের বারান্দাতে হবে না, পুলিশ সুপারের বারান্দাতে হবে না, কোন গোয়েন্দা সংস্থার অফিসেও হবে না।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোট ব্যবস্থার ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। মানুষের আগ্রহ ছিল না যে ভোটার হতে হবে। আমাদের সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোট হচ্ছে জাতি হিসেবে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন। ভোট হচ্ছে সামগ্রিক ইচ্ছার প্রতিফলন। ভোট স্বচ্ছ হলে সমাজে আমরা স্থিতিশীলতা আনতে পারি। হেরে যাওয়া প্রার্থী যদি হার মেনে জিতে যাওয়া প্রার্থীকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারে, বলতে পারে সাবাস আমি তোমার কাছে হেরে আনন্দিত। এটা তখনি সম্ভব যখন স্বচ্ছ সুন্দর ভোট হবে। ভোটের সাথে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা সরাসরি জড়িত। গণতন্ত্রহীনতা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে কীভাবে হুমকিতে ফেলে দেয় এখন ক্লাস ওয়ানের ছাত্রও বোঝে। মানুষের ক্ষমতা মানুষের কাছে ফিরে যেতে হবে, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে নয়। মানুষের ক্ষমতা যখন মানুষের কাছে থাকবে তখন ১৮ কোটি মানুষকে নিয়ে কেউ ছেলেখেলা করবে না। আর মানুষের ক্ষমতা মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত করা হয়, তাহলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কেনা খুব সহজ। মানুষ কেনা এতো সহজ না।
কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, কষ্ট লাগে যখন দেখি বা শুনি শিক্ষকরাও ব্যক্তিগত ও দলীয় চিন্তার উপরে উঠতে না পেরে মানুষের হক নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতে যেন এমনটি না হয় সে নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতির শিকার ছিল সবাই। কিছু মানুষ হয়তো তালি বাজিয়েছে, কিছু মানুষ হয়তো ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে, কিছু মানুষ হয়তো জীবনের উন্নতির স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বাধ্য হয়েছে। একটা সময় এসেছে আপনারা আপনাদের শাপমোচন করতে পারেন। তওবা করেন। আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করব ইনশাল্লাহ। তারপরও যদি কেউ ভিন্ন কিছু দেখেন বা ভিন্ন পথ দেখেন, তাদের জন্য যা যা করণীয় তাই করা হবে।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী, জেলা নির্বাচন অফিসার এনামুল হকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজারসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।