মেঘনা নদীতে মরে যাচ্ছে মাছ, পরিদর্শনে তদন্ত কমিটি
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে দেশিয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণি মরে যাওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) তদন্ত কমিটি মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। তারা ষাটনল, ষাটনল বাবু বাজার, মোহনপুর ও এখলাছপুর এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান।
তদন্ত কমিটির প্রধান পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. সোহরাব আলী, মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলমগীর কবিরসহ আটজন সদস্য এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ড. মো. সোহরাব আলী বলেন, পুরো এলাকাটা আমরা ঘুরে দেখলাম। মেঘনা নদীর তীরবর্তী চারটি স্পট থেকে পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছি। ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেতে পাঁচ দিন সময় লাগবে। তারপর মেঘনার এ অঞ্চলের মাছ মরে যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে পারব।
এদিকে মেঘনা পাড়ের ষাটনল মালোপাড়া, বাবুবাজার, ছটাকী, দশানি, মোহনপুর, হাশিমপুর, এখলাছপুর ও জহিরাবাদ এলাকার নদীর পাড়ের বেশ কজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২৫ দিন ধরে ভাটার সময় মেঘনা নদীর পাড়ে চেউয়া, পুটি, চিংড়ি, পাঙাশ, আইর, কাচকি, বেলেসহ বিভিন্ন জাতের মরা মাছ ভেসে উঠছে। মাছ ছাড়া সেলেং, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপসহ নানা জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠছে।
সম্প্রতি মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে নদীর পানির মান পরীক্ষা করছে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলাফলে দেখা গেছে, মেঘনার পানিতে পিএইচ–এর পরিমাণ কমে এখন ছয় থেকে সাড়ে ছয় পিপিএম–এ দাঁড়িয়েছে। এর স্বাভাবিক পরিমাণ বা নরমাল ভ্যালু সাড়ে সাত থেকে ৯ পিপিএম। পানিতে অ্যামোনিয়ার স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে শূন্য দশমিক এক পিপিএম। মেঘনার পানিতে সেটি বেড়ে এখন শূন্য দশমিক দুই পিপিএম বা এরও বেশি রয়েছে। পানিতে অক্সিজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ পিপিএম। অতিরিক্ত দূষণের ফলে মেঘনার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে এক থেকে দেড় পিপিএম–এ। এ কারণে ব্যাপক হারে মাছ মরে যাচ্ছে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার বলেন, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে যাওয়ায় ব্যাপক হারে মাছ মরছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে মেঘনার মিঠাপানিও দূষিত হয়ে উঠছে।