যে উপজেলায় ১৮ বছর ধরে ঘোরে না পাবলিক বাসের চাকা

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক আছে, আছে ব্রিজ-কালভার্টও। তবে ১৮ বছর ধরে এ উপজেলায় নেই কোনো পাবলিক বাসের চলাচল। খানসামার মানুষ আধুনিকায়নের সাথে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর চেষ্টা করলেও এখানে যাত্রীবাহী বাসের চাকা ঘোরে না দীর্ঘদিন ধরে।
উপজেলার প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক দখল করে চলে ভটভটি, নসিমন, অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান। বাস চলাচল না করায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এসব অবৈধ যানবাহনেই চলাচল করতে হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, এমনকি প্রাণহানিও।
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে খানসামা উপজেলার সড়কপথে দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। আর এখান থেকে নীলফামারী জেলা সদরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সৈয়দপুরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার ও বীরগঞ্জের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। উপজেলা সদর থেকে এসব স্থানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক পাকা সড়ক। কিন্তু বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী বাস। গত কয়েক বছরে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানে খানসামা থেকে নীলফামারী ও ইপিজেড যেতে প্রাণ গেছে কয়েকজনের। অবৈধ এসব যানে চলাচল করতে এই উপজেলায় প্রতি বছরই ঝরছে বহু মানুষের প্রাণ।
আধুনিক যুগেও জনগণের এই দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানান, সুবিধাবাদী একটি চক্রের কারণেই বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও এ উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চলাচল করানো সম্ভব হয়নি। রাতে কেবল ঢাকাগামী কিছু নাইট কোচ চললে আন্তঃজেলা, উপজেলাগামী কোনো বাস চলাচল করছে না।
স্থানীয় শিক্ষক সমিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের উপজেলা অনেক আগেই বাস চলাচল করেছিল। আমরাও এই বাসে করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলাম। আমি চাই আবার পুনরায় বাস চালু করা হোক।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বলেন, আমি দীর্ঘদিন বাসস্ট্যান্ডে দোকান করতাম। এরপর বাস বন্ধ হয়ে যায়। বাস বন্ধ হওয়ায় আমি বেকার হয়ে পড়ি। এখন বর্তমানে ছোটখাটো ব্যবসা করি। ব্যবসার কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। তাই আমি চাই পুনরায় যেন বাস চালু করা হয়।
রাশেদ মিলন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের উপজেলায় বাস চলাচল না করাটা লজ্জাজনক। যে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, সে এলাকা উন্নত বলাটা কতটুকু যৌক্তিক।
সৈয়দপুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়া পথচারী মিজান বলেন, অটোরিকশার জন্য অপেক্ষায় আছি। বাস তো দীর্ঘদিন ধরে নেই। তাই বাধ্য হয়ে এসব অবৈধ যানবাহনে যেতে হচ্ছে।
বাস না চলেও রয়েছে মোটর পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের শাখা। স্থানীয় শ্রমিক নেতা তালহা চৌধুরী বলেন, রাস্তা সরু হওয়ায় ১৮ বছর আগে এ উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে রাস্তাগুলো ভালো হওয়ায় আবার বাস চলাচলের জন্য মোটরমালিক সমিতিকে জানানো হয়েছে।
দিনাজপুর মোটর পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি ভবানী শংকর আগরওয়ালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি কিন্তু হয়নি। আমাদের মিটিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই বাস পাবেন।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান সরকার জানান, এই উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চালু করতে হলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।