গ্রীষ্মের ড্রাগন শীতে উৎপাদনে সফল তিন বন্ধু

ড্রাগন মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। তবে শীতকালে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে ড্রাগন চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিন বন্ধু। বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের গোটকান্দি গ্রামের ইকবাল হোসেন, মো. বিল্লাল ও সুজন মিয়ার কথা। তারা তাদের গ্রামে এক একর জমিতে এই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। তাদের সফলতা দেখে এখন অনেকেই ড্রাগন ফল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, এক একর জমিতে ১ হাজার ৫০০ খুঁটিতে প্রায় ছয় হাজার চারা সম্বলিত আধুনিক ড্রাগন বাগান স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে বাগানটি শুরু করা হয়। এখন পর্যন্ত বাগান থেকে ২২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। সবচেয়ে বড় চমকের বিষয় তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শে লাইটের মাধ্যমে কৃত্রিম আলোতে শীতকালে ড্রাগন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। রাতে যখন বৈদ্যুতিক বাতি একসঙ্গে জ্বলে উঠে, দূর থেকে আলোর রশ্মি নজরে আসে। সে এক মনোরম দৃশ্য। রাতে এই দৃশ্য দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন এই ড্রাগন বাগানে।
বাগান মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, ড্রাগন মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। এ সময় যে উৎপাদন হয় তার চেয়ে বেশি ফলন হয় শীতকালে লাইটিং পদ্ধতিতে। এ সময়ে দামও পাওয়া যায় প্রায় দ্বিগুণ। তিনি বলেন, তারা তিন বন্ধু একসঙ্গে ২০২২ সালে এক একর জমি লিজ নিয়ে ড্রাগন বাগান তৈরি করেন। এতদিন সাধারণ পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করলেও এবার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ শীতকালে ড্রাগন ফল চাষের প্রযুক্তি তাদের শিখিয়ে দেন। সে অনুযায়ী প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ড্রাগনের ফুলে পরাগায়নের জন্য তিন ঘণ্টা লাইট জ্বালাতে হয়। সবগুলো লাইট একসঙ্গে জ্বলে উঠলে জমি দিনের আলোর মতো হয়ে যায়। লাইটিংয়ের ফলে রাতে বাগানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে বাগানে বেশি পরিমাণ ফুল ও ফল ধরছে। বর্তমানে বাগান ফুল-ফলে ভরে গেছে।
ইকবাল আরও জানান, আগে সিজনে মোট ২৫ টন ফল উৎপাদন হতো। নতুন পদ্ধতিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি ফলন হচ্ছে। ফলের মানও ভালো হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে ফলের দাম কম থাকে। তখন প্রতি কেজি ড্রাগন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে বাগানের ড্রাগন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানায়, স্বাভাবিকভাবে মে মাসের শুরুর দিকে ড্রাগন গাছে ফুল আসা শুরু হয়, যা চলে অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়টিই ধরা হয় ড্রাগনের মৌসুম। কৃত্রিম আলো দিয়েও মৌসুম ছাড়া (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) ড্রাগন ফল উৎপাদন করা যায়। ড্রাগন ফল উৎপাদনের জন্য দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়। শীতে সূর্যের আলো ও তাপ কম থাকায় ভালোভাবে ড্রাগন ফুল ফলে রূপান্তরিত হতে পারে না। আর এই সময়টাতে সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো ব্যবহার করে চমৎকার ফুল ফুটিয়ে ফল উৎপাদন করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, অসময়ে ড্রাগন ফল উৎপাদন করে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, ভোক্তারাও সুস্বাদু ফলটি পাচ্ছেন। বাগানে কোনো রাসায়নিক কীটনাশক বা হরমোন বা টনিক ব্যবহার করা হয় না, যার ফলে এটি একটি পরিবেশবান্ধব স্বাস্থ্যসম্মত ফল।