৯২ বছরেও রোজা রেখে ভ্যান চালান ইসরাফ আলী

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ ইসরাফ আলী মোল্লা (৯২)। কমেছে চোখের আলো। এখন ঠিকমতো দেখতে পান না। শরীরের শক্তিও আর আগের মতো নেই। তবুও এই বয়সেও সংসারের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন এই বৃদ্ধ।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত হারান মোল্লার ছেলে ইসরাফ আলী মোল্লা। স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ের নিয়ে তার সংসার। এই ভ্যান চালিয়েই সবাইকে মানুষ করেছেন তিনি। তবে এখন তারা সবাই পৃথক। কেবল সঙ্গে রয়েছেন তার সহধর্মিণী।
বৃদ্ধ ভ্যানচালক ইসরাফ আলী মোল্লা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি খুব বড় বংশীয় ঘরের ছেলে। তবে বাবার সহায় সম্পত্তি কিছু পাইনি। মা আমার জন্মের পরই মারা যান। এরপর আমি নানির কাছে মানুষ হয়েছি। জায়গাজমি তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমি এখন পরিশ্রম করে খাই। ভ্যান চালিয়ে বাড়ির জন্য ১৭ শতক জায়গা কিনেছিলাম। এ ছাড়া আমার সহায় সম্পত্তি কিছু নেই।
প্রতিদিন কতটাকা আয় হয় এমন প্রশ্নে ইসরাফ আলীর সহজ উত্তর। কত আয় হয় ঠিক নেই, প্রতিদিন ১০০ হয় আবার ২০০ হয়। আবার কোনো কোনো দিন ২৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। যেদিন শরীর ভালো থাকে সেদিন একটু বেশি ভাড়া মারতে পারি। আজ সারাদিনে ১৬০ টাকা আয় হয়েছে।
বৃদ্ধ ইসরাফ আরও বলেন, ছেলেরাও ভ্যান চালায়, কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। তবে ছোট ছেলের তিনটি মেয়ে রয়েছে, তারা সবাই প্রতিবন্ধী। সেজ (তৃতীয় নম্বর) ছেলের দুই সন্তান রয়েছে, তারাও প্রতিবন্ধী। এদের সবাইকে দেখতে হয়। এই হাত-পা ছাড়া আমার কোনো সম্বল নেই।
বৃদ্ধ বয়সে রোজা রেখে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইসরাফ আলী বলেন, রোজা অবস্থায় ভ্যান চালাতে তো কষ্ট হয়ই। ঘাড়ে যখন বোঝা আসে তখন তো আরও বেশি কষ্ট হয়। এটা তো বসে থাকার কাজ না। রোদ, কুয়াশা সব কিছুর মধ্যেই ভ্যান চালাতে হয়।
ইসরাফ আলী আরও বলেন, একবার তো আমার ভ্যান চুরিও হয়ে গিয়েছিল। পরে একজন ভ্যান কিনে দিয়েছিল।