পদত্যাগপত্র জমা দিলেন সিনিয়র জেলা জজ বিকাশ কুমার সাহা

আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রভাবশালী যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) সিনিয়র জেলা জজ বিকাশ কুমার সাহা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর আগে তাকে ওএসডি করা হয়।
গতকাল সোমবার (১০ মার্চ) আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এই পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগপত্রে বিকাশ কুমার সাহা আগামী ১০ এপ্রিল থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিমকোর্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
পদত্যাগপত্রে বিকাশ কুমার সাহা লিখেছেন, ‘আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল তারিখে সহকারী জজ পদে যোগদান করে নিয়মিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তা (সিনিয়র জেলা জজ) হিসেবে কর্মরত আছি। বর্তমানে আমার চাকরিকাল ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে। আমি ব্যক্তিগত কারণে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৪ অনুযায়ী আগামী ১০ এপ্রিল ২০২৫ থেকে সরকারি চাকরি থেকে ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।’
এর আগে গত ২ মার্চ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহাকে একটি শোকজ নোটিশ দেয় মন্ত্রণালয়। এতে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ ও আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়, আইন ও বিচার বিভাগের ওএসডি কর্মকর্তা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বিকাশ কুমার সাহা যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-১) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে কক্সবাজার জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালত ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় কর্মচারীদের শূন্য পদে অভিযোগকারী মো. জাফর আহমেদসহ উক্ত অভিযোগে বর্ণিত ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনদের চাকরি প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। অভিযোগে উল্লিখিত বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে ঘুষ হিসেবে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই চাকরিপ্রার্থীদের কোনো চাকরি প্রদান না করে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন এবং টাকা প্রদানকারীরা ওই টাকা ফেরত চাইলে তিনি তার পদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার ভীতি প্রদর্শন করেন।
নোটিশে আরও বলা হয়, বিকাশ কুমার সাহার উক্তরূপ কার্য অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অবিবেচনাপ্রসূত ও অবিচারকসুলভ মনোভাব তথা একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার জন্য অপ্রত্যাশিত ও দুর্নীতিমূলক কাজ হিসেবে গণ্য, যা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭-এর বিধি ২(চ) ও ২(ঠ) অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ ও দুর্নীতিমূলক কার্যের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ। সে কারণে ওই বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার উক্ত আচরণ ও দুর্নীতিমূলক কার্যের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭-এর ৩(২) বিধি অনুযায়ী আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ওএসডি কর্মকর্তা) বিকাশ কুমার সাহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ফটোকপি প্রেরণ পূর্বক আগামী ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে তার লিখিত ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে ওই নোটিশে। এ বিষয়ে বিকাশ কুমার সাহার কোনও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এর আগে বিকাশ কুমার সাহা ঢাকার সিএমএম হিসেবে থাকাবস্থায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জামিন, খালাস দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ে বসে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সাজা ও রিমান্ডের কারিগর ছিলেন এ বিকাশ কুমার সাহা।