‘খাদ্যদ্রব্যের মোড়কে উপাদানের পরিমাণের তথ্য নিশ্চিত করতে হবে’

অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের ফ্রন্ট প্যাকেটে লেভেলিংয়ের এসব উপাদানের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য অসংক্রামক রোগ কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আজ শনিবার (২২ মার্চ) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ-সাবেক বিএসএমএমইউ) এক আলোচনা সভায় আলোচকদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে এসেছে।
বিএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মোড়কজাত খাদ্যের উপাদান সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বিএমইউ ও সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাসেয়ার্স (সিএলপিএ)। এ সময় জনস্বাস্থ্য এবং ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, খাবারের নামে বিষ কিনে খাচ্ছি কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের দেশে রোগ বাড়ছে, তাই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, সরকার মোড়কজাত খাবারে চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক তথ্য যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
সভায় আলোচকরা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার খাদ্যের ফ্রন্ট প্যাকেটে লেভেলিংয়ে চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মোড়কজাত খাদ্যে এসব তথ্য অসংক্রামক রোগ কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আলোচকরা আরও বলেন, দ্রব্যের মোড়কে চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইত্যাদির মাত্রা সুস্পষ্টভাবে লেখার ব্যবস্থা থাকা জরুরি, যাতে নিরক্ষর ক্রেতারাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য চিহ্নিত করতে পারে। খাদ্যে কোন দ্রব্যের মাত্রা কতটুকু হবে, কীভাবে হবে এবং কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হবে তা সুস্পষ্ট করা জরুরি। এ ছাড়া এ সব বিধান বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং, সমন্বয় ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় প্যাকেজিং ও লেবেলিং বিষয়ক একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয় সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের পক্ষ থেকে। এতে দেখা যায়, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং চিপসে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কবাণী নেই। উপরন্তু প্যাকেটে মোটিভেশনাল বিভিন্ন শব্দের উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া মার্কেটিং সংক্রান্ত তথ্যে দেখা গেছে, প্রায় শতভাগ দোকানে চিপস ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়ের বিজ্ঞাপন রয়েছে। ৭০ শতাংশ দোকানি অতিরিক্ত বিক্রির জন্য কমিশন পায়। আর ৫২ শতাংশ দোকানে ব্র্যান্ডের ফ্রিজ এবং ৩৬ শতাংশ দোকানে সাইনবোর্ড রয়েছে।
বিএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আতিকুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. খালেকুজ্জামান রুমেল, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোয়েব, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউভেটরের কার্ডিওভাস্কুলার হেলথ অ্যান্ড ড্রাউনিং প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, গবেষক সুশান্ত সিনহা, অধ্যাপক ড. সাইদুর আরেফিন, ডা. অফম সারোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউভেটর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পাবলিক হেলথ লইয়ার্স নেটওয়ার্ক, সিটিজেন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।