সাত দফা দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটি

রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম সংস্কারে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটি (বিএমসি)। শনিবার (২২ মার্চ) সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. শাহীনুল আলমের সঙ্গে সাক্ষাতে সাত দফা দাবির কথা জানানো হয়।
পরে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটির (বিএমসি) কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মাহমুদুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশের প্রতিটি খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলেও বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ তৈরির অন্যতম প্রধান মাধ্যম রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এই অবস্থায় চিকিৎসক ও মেডিকেল স্টুডেন্টদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটি (বিএমসি) রেসিডেন্সি এবং নন-রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম সংস্কারে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি) শিরোনামে সাত দফা দাবি উত্থাপন করছে।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি) শিরোনামে এসব দাবি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি কামনা করেন তারা।
এ সময় ডা. মাহমুদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। এর আওতায় নিচের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সেগুলো হলো—
ক. দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিশন গঠন করে যৌক্তিক সংস্কার সাধন করতে হবে। খ. কমিশনে দুইজন রেসিডেন্ট ও দুইজন নন-রেসিডেন্ট অবশ্যই রাখতে হবে। গ. যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোর্স কারিকুলাম আপডেট করে ট্রেইনিদের হাতে কলমে ইন্টারভেনশন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি শেখার সুযোগ দিতে হবে। ঘ. বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য ই-লগবুক নিশ্চিত করতে হবে। ঙ. সব প্রতিষ্ঠানে সব রেসিডেন্টদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, থিসিস গ্র্যান্ট, বুক গ্রান্ট, ট্রেনিং মডিউলসহ সমান সুযোগ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
চ. রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্টদের সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো প্রণয়ন করে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ছ. সকল প্রতিষ্ঠানে ক্লাস, ট্রেনিং ব্লকের অভিন্ন মান নিশ্চিতকরণে অবিলম্বে কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্সি টিম গঠন করতে হবে। জ. কোর্স ডিউরেশনের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ঝ. ট্রেনিংয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং উক্ত ট্রেনিং অন্য যেকোনো পোস্ট গ্রাজুয়েশন এ গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
এ ছাড়াও রয়েছে সেগমেন্টাল পাস নিশ্চিতকরণের দাবি। এ প্রসঙ্গে ডা. মাহমুদুর রহমান চৌধুরী বলেন, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সেগমেন্টাল পাসের একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে জানুয়ারি ২০২৫ সেশনে যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের থেকেই কার্যকর করতে হবে।
সেই সঙ্গে পরীক্ষা পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার করার কথা উল্লেখ করা হয়। এর পক্ষে চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো—
ক. আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। খ. প্রতিটি পরীক্ষায় ডিপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাস রেটের অসামঞ্জস্য দূর করে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে হবে। গ. ভর্তি পরীক্ষা, ফেইজ-এ এবং ফেইজ-বি পরীক্ষার মার্ক পরীক্ষার পর দ্রুততম সময়ে প্রকাশ করতে হবে। ঘ. এক্সামিনার এবং ট্রেইনারদের জন্য রিভিউ সিস্টেম চালু এবং তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ঙ. পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়িয়ে বিএমইউ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রিক সংস্কারে নিম্নোক্ত দাবি উপস্থাপন করা হয়। যথা—
ক. ভর্তি পরীক্ষার ফি সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার মধ্যে রাখতে হবে। খ. পরীক্ষায় অংশ নিতে ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পর এক বছর সম্পন্ন হওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে হবে। গ. ন্যূনতম তিনটি সাবজেক্ট চয়েসের (মাল্টিপল চয়েস) ব্যবস্থা করতে হবে। ঘ. ভর্তি পরীক্ষায় ওয়েটিং লিস্ট এবং মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
ফেইজ-এ, ফেইজ-বি এবং ডিপ্লোমা ফাইনাল পরীক্ষা কেন্দ্রিক সংস্কার। এ দফা দাবির আওতায় চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো—
ক. পরীক্ষার ফি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে রাখতে হবে। খ. ভর্তি ফি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন হবে এবং অবশ্যই তা পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে রাখতে হবে। গ. সরকারি চিকিৎসকদের ডেপুটেশন অবস্থায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে। ঘ. ক্যারি অন সিস্টেম চালু করতে হবে। ঙ. যে কোনো পরীক্ষায় ফেল করলে পরীক্ষার্থীর জন্য ন্যূনতম এক বছর ক্যারি অন সিস্টেম চালু করতে হবে।
ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন করতে হবে। এর আওতায় নিম্নোক্ত কাজের বাস্তবায়ন চান চিকিৎসকরা। সেগুলো হলো—
ক. ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নাম দিতে হবে। খ. গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএমইউ রেসিডেন্ট ডা. রোমেনা আফরোজ, এনআইসিভিডির রেসিডেন্ট ডা. ফয়সাল লতিফ ও বিএমইউর রেসিডেন্ট ডা. জোবায়দা খানমসহ বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত চিকিৎসকরা।