আলোচিত সেই ‘ক্রিম আপাকে’ পাঠানো হলো আদালতে

সাভারের আশুলিয়ার আলোচিত শারমিন শিলা ওরফে ‘ক্রিম আপা’কে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে তাকে প্রিজনভ্যানে আশুলিয়া থানা থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়।
নিজের সন্তানদের নির্যাতনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর এবং সহিংস আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে ঢাকার সাভার থেকে আশুলিয়া থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
অনলাইনে ভিউ পাওয়ার জন্য অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের নির্যাতন করে আসছিলেন শারমিন শিলা ওরফে ‘ক্রিম আপা’। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। অনেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহরিমা খাতুন বলেন, ইউনিসেফের সহায়তায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চালু হওয়া ওই হট লাইন নম্বরে অসংখ্য মানুষ অভিযোগ জানিয়ে ফোন করে শারমিন শিলা ওরফে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে। আমাদের একটি টিম এ বিষয়ে কাজ শুরু করে।
প্রথম দিকে তাকে অনলাইনে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ না করার বিষয়ে সচেতন করা হলেও কিছুদিন বিরতির পর তিনি পুনরায় নিষ্ঠুর কাজগুলো শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শারমিন শিলা ওরফে ‘ক্রিম আপা’কে বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে সমাজসেবা কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। সেখানে তাকে শিশু নির্যাতন বিষয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
পরে পুলিশের একটি দল ওই দপ্তর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানায় নিয়ে যায়। শারমিন শিলা ওরফে ‘ক্রিম আপা’কে শিশু নির্যাতন আইনের মামলার আসামি দেখিয়ে আদালতে প্রতিবেদন পেশ করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভারের আশুলিয়ায় বসবাসকারী শারমিন শিলা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত। তিনি মেকআপের কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করে বিক্রি করেন। এছাড়া নিজের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে পোস্ট দেন। গত ৩০ মার্চ নিজের ফেইসবুক আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন শারমিন শিলা, যা পরবর্তীতে ভাইরাল হয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শারমিন শিলা তার মেয়ে শিশুকে (আনুমানিক ২ বছর) জোর করে একহাতে দিয়ে মুখে চাপ দিয়ে হা করিয়ে মেয়ের অসম্মতিতে কেক জাতীয় কিছু খেতে বাধ্য করছেন। এছাড়াও, তিনি তার ছেলে ও মেয়ে শিশুদের ক্যামেরার সামনে এনে জোর করে চুলকাটা, রং করা, কানে ভারী দুল পরানো, শিশুদের মুখে কুলকুচি করা, অপমানজনক গালিগালাজ করা, থাপ্পড় ও শারীরিক কষ্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত ভিডিও তৈরি করেছেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার জন্য গত এক বছর ধরে দুই শিশু সন্তানের প্রতি মাতৃসুলভ আচরণ না করে আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলাসহ তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ ধরনের আচরণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় শারমিন শিলা ওরফে ‘ক্রিম আপা’ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি যা করেছিলেন সব না বুঝে করেছিলেন। বুঝতে পেরে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। এখন তাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তার শিশুদেরকে আরও অনিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।