দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুদকের অভিযান

দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রোববার (২০ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক মো. আখতারুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহ রিজিয়ন রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরআরআইডিপি) সংশ্লিষ্ট এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার কর্তৃক টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দুটি রাস্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরিমাপ করা এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যালোচনায় একটি প্রকল্পের কাজ আংশিক বাস্তবায়ন করে সমুদয় কাজের চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করে আত্মসাতের প্রথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাস্তবায়িত আংশিক কাজে নিচের বালুর স্তর ঠিক পাওয়া গেলেও খোয়া-বালু (সাব-বেইস) ও খোয়া (ডব্লিউবিএম) -এর থিকনেস অনেক কম এবং নিম্নমানের খোয়া পাওয়া যায়। অপর প্রকল্পে, আংশিক কাজ করে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত বিল প্রদান করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সাথে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অস্তিত্বহীন মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্তিকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়।
টিম সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায়, চারিদিকে সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে ‘নতুন পাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা’ নামে সম্প্রতি একটি স্থাপনা তৈরি করে মাদ্রাসাটি চালু করা হয়েছে। মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, তাদের পাশের ‘হাসমত উল্লাহ কিন্ডারগার্টেন স্কুল’ থেকে কিছুক্ষণ আগে ক্লাসে নিয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী সংখ্যা, বেঞ্চ ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন রেজুলেশন বা ডকুমেন্ট দেখতে চাইলে মাদ্রাসার প্রধান সেগুলো দুদক টিমের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি।
তাৎক্ষণিক রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে হঠাৎ করে স্থাপনা তৈরি করে প্রকৃত শিক্ষার্থীবিহীন এই মাদ্রাসাটিতে এমপিওভুক্তিকরণের উদ্যোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় সাধন সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা টিমের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র অধিকতর বিশ্লেষণ করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এ ছাড়া মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশে ‘উদ্দীপন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় থেকে রোববার একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে দুদক টিম সংশ্লিষ্ট এনজিও উদ্দীপন এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলি সংগ্রহ করে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় টিমের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত এনজিও হিসেবে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকালে উদ্দীপনের সাবেক চেয়ারম্যান, বোর্ড মেম্বারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে ব্যক্তিগত লাভ ও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মাইক্রোক্রেডিট আইন (২০০৬) -এর ২৪(৩) ধারা ও বিধি (২০১০) -এর বিধি ১৯ (১) (ক) লঙ্ঘন করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ তহবিল থেকে অনুমোদনহীন নামমাত্র ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।