ফ্যাসিবাদী বিচারকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে : আইনজীবী ফোরাম

ফ্যাসিবাদের দোসর সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পর যারা বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করেছিলেন। তাকে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রেখে অসুস্থ করেছিলেন, তারা নিজ থেকে চলে যাবেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আপনারা যাননি। আপনাদের জন্য আবার আইনজীবী ফোরামকে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। এখনো সময় আছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেরা পদত্যাগ করে চলে যান।
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেরাই কেটে পড়ুন। অন্যথায় আইনজীবীরা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপনারা অস্তিত্ব নিয়ে যেতে পারবেন না। আমরা মনে করি ফ্যাসিস্ট বিচারপতিরা বিদায় নিলে বিচার বিভাগ সুষ্ঠুভাবে চলবে, মানবাধিকার সুষ্ঠুভাবে চলবে ও গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে।
সরকারের উদ্দেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বলেন, আপনারা অনেককে জেলে দিয়েছেন। খায়রুল হকের (সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) বিচার কেন করলেন না। খায়রুল হকের বিচার না করলে জনগণ আপনাদের বিচার করবে। তিনি আরও বলেন, যেসব ফ্যাসিস্ট এখনো গর্তের মধ্যে লুকিয়ে আছে তাদের খুঁজে বের করে বিচার করতে হবে।
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একদিনে ফ্যাসিস্টে পরিণত হননি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ তাকে ‘ফ্যাসিস্টে’ পরিণত করতে কাজ করেছে প্রত্যক্ষভাবে। সেসব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হল বিচার বিভাগ। অনেক বিচারপতি নির্লজ্জভাবে দলীয় মতাদর্শ ধারণ করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমকে দীর্ঘায়িত করার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়, তাকে কারাগারে প্রেরণ সব কিছু ছিল শেখ হাসিনার নির্দেশে।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে একটি বেঞ্চ (বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ) বিএনপির অনেক এমপিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অনেক এমপি প্রার্থীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। কোনো আইনকে ফলো করে নাই। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার নির্দেশকে বাস্তবায়ন কারা জন্য এবং সেই বিচারকদের দলীয় আদর্শকে ধারণ করে তাদের মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এরকম অন্যায় কাজ করা হয়েছিল।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি সেই সব বিচারপতিরা নিজেরাই বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছায় এই পবিত্র বিচারাঙ্গন থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন। কিন্তু এখনো কিছু কিছু ফ্যাসিস্ট বিচারক আরও প্রমোশনের আশায় বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। অনতিবিলম্বে তারা যেন চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খায়রুল হক (সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) কেনো এখনও তার বাসায় আরামে ঘুমাচ্ছে। এই খায়রুল হক বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। এই খায়রুল হক দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করেছে। আর এখন সে আরামে ঘুমায়। বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি যখন শেখ হাসিনা কেড়ে নেয়। সিনিয়র আইনজীবীসহ আমরা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আদালতে আবেদন পেন্ডিং ছিল। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অনেক আইনজীবীরা গিয়েছিলাম। খায়রুল হক জবাব দিয়েছিল রাষ্ট্রের ব্যাপারে আমি কি করব।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব বলেন আরও বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা জানতে চাই কেনো খায়রুল হকের ব্যাপারে কোনো ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত আইনগতভাবে নেওয়া হচ্ছে না।
এসময় জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, আপোসের কোনো সুযোগ নেই। আপিল বিভাগ ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগকে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করতে হবে।
জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি এম বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর এবিএম খায়রুল হকের বিচার করতে হবে। বিচার বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসরদের মুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এম বদরুদ্দোজা বাদলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গাজী তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আইনজীবী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন প্রমুখ।