২ যুগ ধরে অচল সেতু, জনদুর্ভোগ চরমে

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামে করতোয়া নদীর শাখা সমাজ ঝিটকি কাটা খালের ওপর নির্মিত একটি কংক্রিট সেতু ২৩ বছর ধরে পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭০ ফুট দীর্ঘ এই সেতু আজও জনগণের কোনো কাজে আসেনি। নির্মাণের পর থেকেই এটি সংযোগ সড়কবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে সেতুটি এখন যেন একটি দ্বীপ। একা দাঁড়িয়ে থাকা এক অচল কাঠামো।
জানা গেছে, ২০০১ সালে সরকারের এলজিইডি বিভাগের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পরপরই বন্যায় দুই পাশের মাটি ভেঙে যায় এবং সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় কেটে গেলেও কোনো ধরনের সংস্কার হয়নি। নেই কোনো সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা কিংবা বাস্তবায়নের উদ্যোগ। সংযোগ সড়ক না থাকায় সমাজ বলচপুর, মিয়াপাড়া, গদাইরূপসি, বানিয়াবহু, সাতবাড়িয়া ও ময়দানদিঘী এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কৃষি নির্ভর এসব গ্রামের মানুষ প্রতিদিন তাদের ফসল, সবজি বা গবাদিপশু নিয়ে বিকল্প পথে প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব ঘুরে হাট-বাজারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে দুর্ভোগ আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসী একাধিকবার সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেতুর পাশেই কিছু বাসিন্দা বসবাস করলেও রাস্তা না থাকায় তাদের দৈনন্দিন জীবনও জটিল হয়ে উঠেছে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে রোগী বা শিক্ষার্থীদের চলাচল করাও হয়রানির শামিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আফসার আলী বলেন, ‘আমার জানামতে সেতুটি ২০০১ সালে তৈরি হয়েছিল। তখন থেকেই সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। দুটি পাশে মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি করলে এলাকাবাসী অনেক উপকার পেত। মাঠের ফসল সহজে আনা-নেওয়া করা যেত।’

সমাজ গ্রামের ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২৩ বছর ধরে কংক্রিটের এই বিশাল সেতুটি পড়ে আছে। ব্যবহার না হওয়ায় এখন মাটিতে জমেছে কচুরিপানা আর আগাছা। এটি যেন সরকারের একটি ব্যর্থ প্রকল্পের উদাহরণ। অথচ রাস্তা থাকলে পুরো অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসত।
গদাইরূপসি গ্রামের শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু দুই যুগ ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকা নিঃসন্দেহে জনদুর্ভোগ ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত। শুধু সংযোগ সড়কের জন্য অপেক্ষায় পড়ে থাকা এই সেতুটি হয়ে উঠতে পারে পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষের জীবন বদলের এক বাস্তব সুযোগ। তাই আমাদের দাবি, অবিলম্বে সেতুটির উভয় পাশে মাটি ভরাট করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে এটি জনগণের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে।’
চাটমোহর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’