অন্যায় না করেও সরি বলেছিলাম, তবু শাস্তি পেয়েছি : ইলা

Looks like you've blocked notifications!
প্রযোজক-পরিচালক ইলা জাহান নদী। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

বাংলাদেশ প্রযোজক পরিবেশক সমিতির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ডা. ইলা জাহান নদীকে ‘মানহানিকর কার্যকলাপের’ অভিযোগে তিন মাসের জন্য সমিতির কার্যনিবাহী সভার সব কর্মকাণ্ড থেকে স্থগিত করা হয়েছে। তবে ইলার দাবি, তিনি কোনো অসদাচারণ করেননি।

গত ১০ ডিসেম্বর সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইলা জাহান নদী বরাবর পাঠানো হয়, যদিও সেই চিঠি ই-মেইল মারফত ১৭ নভেম্বর পেয়েছেন ইলা। সেখানে লেখা ছিল, ফেসবুকে ইলার একটি পোস্ট ও মন্তব্য সমিতির সদস্যদের জন্য ‘মানহানিকর’, যা নজরে এসেছে প্রযোজকদের। আর ওই পোস্ট ‘সমিতিসহ সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যদের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ’ করেছে। কারণ দর্শানোর পর জবাব ‘সন্তোষজনক নয়’ মর্মে তাঁকে ‘সমিতির সংঘ স্মারক এবং স্মারক বিধি ১৬ গ(৩) ধারা মোতাবেক ১০.১১.২০১৯ থেকে ০৯.০২.২০২০ তারিখ পর্যন্ত কার্যনির্বাহী পরিষদের নিয়মিত সভা, জরুরি সভা এবং প্রযোজনা সংক্রান্ত কমিটি ও পরিবেশনা সংক্রান্ত কমিটির সভায় অংশগ্রহণ থেকে’ ইলাকে ‘বিরত’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ইলার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখা একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে। অ্যাকটিভিটিজে ‘ফিলিং হোপফুল’ যুক্ত করে তিনি প্রযোজক সমিতির একটি সভার দুটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘অনেক প্যাঁচাল সবাই বাচাল, তবুও আশা, ভালোবাসা।’ যেটিকে কেন্দ্র করেই মূলত তাঁর বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সমিতি।

এই প্রসঙ্গে ইলা জাহান নদী এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, তিনি তাঁর সহকর্মী বা কাউকেই অসম্মান করে ওই পোস্ট দেননি। ইলার ভাষায়, ‘আমি মোটেও আমার সহকর্মী বা কাউকেই অসম্মান করতে এটি লিখিনি। খুব ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই সেটি লিখেছিলাম। ইসি মিটিং হয় চার/পাঁচ ঘণ্টার। চলচ্চিত্রের অনেক বিষয় নিয়ে সবাই মিলে কথা বলছিলাম। এই আশা নিয়ে যে ভালো কিছু আউটপুট আসবে কারণ শুধু ভালোবাসা থেকেই চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিকালে এখানে একত্রিত সবাই। একজন নবীন প্রযোজক হিসেবে আমি সিনিয়রদের অবশ্যই সম্মান করি, সেটিতে দ্বিমতের কিছু নেই।’

সমিতি সূত্র থেকে জানা যায়, নবনির্বাচিত কমিটির অধিকাংশই বিষয়টিকে ‘আপত্তিকর’ মনে করেছিলেন এবং সমিতি থেকে তাঁকে কারণ দর্শিয়ে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে প্রযোজক ও পরিচালক ইলা জাহান নদী বলেন, ‘মৌখিকভাবে অনেকে বিষয়টির জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি আমার ভাবনা জবাবপত্রে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করি। বেশ কিছু যুক্তি এবং ব্যাকরণের কিছু ব্যাখ্যা ও উপন্যাসের কিছু উদাহরণ তুলে ধরি। এর পরে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করি যে আমার অনিচ্ছাতে কারো মনে আঘাত লাগলে আমি সরি ফিল করছি। শুধু একজন নবীন সদস্য হিসেবে সেটা আমি করেছি। মৌখিকভাবে এটি নিয়ে যতবার আলাপ হয়েছে, আমাকে রাখাই হয়নি সেখানে। বলতে দেওয়া হয়নি একটি কথাও। আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন, স্নেহ করেন; তবু কেন এমন একপেশে আচরণ করলেন, জানি না। এসব ঘটনার শুরু থেকে শেষ দিনের আগে পর্যন্ত সভাপতি (খোরশেদ আলম খসরু) ব্যস্ততার কারণে এসব মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি এ ব্যাপারে হয়তো পরবর্তীতে মৌখিকভাবে অবগত হয়েছেন। এখানেই হয়তো কিছুটা মিসকম্যুনিকেশন বা গ্যাপ হয়ে গেছে। এর জবাবে সমিতি আরো একটি পত্র দিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। কোন বিষয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট হলেন না, তা জানতে চেয়ে জবাবে আমার বোঝার সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে কোন ব্যাপারে আবার ব্যাখ্যা করব, তা জানতে চাই। এর জবাবে আমাকে তিন মাসের জন্য সমিতির সকল কার্যক্রম থেকে স্থগিত করে দেওয়া হয়।’

ইলার ভাষ্য, “আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম মিডিয়ায় বলা হচ্ছে যে আমি সরি বললে নাকি আমার শাস্তি হতো না। আমি দোষ না করেই দোষী হয়েছি। সরি বলেও নিষেধাজ্ঞা পেয়েছি। বুঝতে পারছি না, ‘সরি’ এখন কীভাবে বলতে হবে। সম্ভবত তাঁরা আমার চিঠি পড়েই দেখেননি। প্রথম নোটিশের জবাবেই আমি স্পষ্ট বাংলায় লিখেছিলাম—আমার লেখার কারণে (উল্লেখিত ফেসবুক পোস্ট) শ্রুতিতে আঘাত হানার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

এদিকে, প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু একাধিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইলা জাহান নদী যদি সেই ভুলে অনুতপ্ত হন এবং দুঃখপ্রকাশ করে শাস্তি কমানোর আবেদন করেন, তবে শাস্তি কমানোর কথা বিবেচনা করবে সমিতি।

তবে অনেকেই বলছেন, নবীন বলেই এমন সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছেন ইলা জাহান নদী। কেউ কেউ বলছেন, নারী নেতৃত্বকে দমিয়ে রাখতেই হয়তো এমনটা করেছে সমিতি।