অভিনেতার পাশাপাশি ভালো মানুষ ছিলেন সাদেক বাচ্চু : আলমগীর
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অভিনেতা সাদেক বাচ্চু আর নেই। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গন। শোকে কাতর চিত্রনায়ক আলমগীরও।
মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনটিভি অনলাইনকে নায়ক আলমগীর বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে খবরটি শুনেছি। খুবই কষ্ট পেয়েছি। সাদেক বাচ্চু কতটা সফল বা শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন, সে বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। সারা দেশের মানুষই এটি জানেন। আমি যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে, তিনি কতটা ভালো মানুষ ছিলেন। একটা বিষয় আমি বলতে চাই, সেটা হচ্ছে তাঁর ভাইবোনকে অনেক ছোট রেখেই সাদেক বাচ্চুর বাবা মারা যান। শুধু নিজের ভাইবোনদের প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিয়ে করেছেন অনেক পরে, যখন তাঁর সব ভাইবোন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ হিসেবে কতটা ভালো ছিলেন তিনি।’
আলমগীর আরো বলেন, ‘করোনার কারণে শুধু আমরা নই, আজ সারা বিশ্বই পিছিয়ে গেছে। সব দেশের চলচ্চিত্রই এখন সংকটে পড়েছে। এই চলচ্চিত্র আবারও ঘুরে দাঁড়াতে যাঁরা ভূমিকা রাখতে পারতেন, সাদেক বাচ্চু তাঁদের অন্যতম। এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। তিনি এমন একটি কারণে মারা গেলেন, যেখানে আমাদের কারো কিছু করার নেই। তবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হচ্ছে তাঁর জন্য দোয়া করতে পারি। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁকে শান্তিতে রাখেন।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা সাদেক বাচ্চু মারা গেছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই অভিনেতা (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী । তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দুবার তাঁর হার্ট ফেল হয়েছে। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছি আমরা।’
গতকাল রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে এনটিভি অনলাইনকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, দুপুরে সাদেক বাচ্চুর চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড বসবে। তারপর সাদেক বাচ্চুর চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মেডিকেল বোর্ডের মিটিং শেষে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানান, সাদেক বাচ্চুর চিকিৎসায় ডাক্তারদের আর কিছুই করার নেই। রোববার পৌনে ৫টার দিকে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাদেক বাচ্চুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁকে শতভাগ অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। দুপুরে প্রফেসর রেদোয়ানুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বসেছিল। তারপর উনার চিকিৎসায় কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখন যে অবস্থা উনার, চিকিৎসায় ডাক্তারদের আর কিছুই করার নেই। তাঁর অবস্থার উন্নতি হতে পারে, আবার অবনতিও হতে পারে।’
এর আগে ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হলে গত ৭ সেপ্টেম্বর সাদেক বাচ্চু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। একদিন পর তাঁর অবস্থার অবনতি হতে তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি কোভিড ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন।
সাদেক বাচ্চু বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম খল-অভিনেতা। মঞ্চ ও টিভি নাটক থেকে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ১৯৭৭-৭৮ সালে বিটিভির নিয়মিত শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন সাদেক বাচ্চু। বিটিভিতে তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক ‘প্রথম অঙ্গীকার’।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নায়ক আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রের জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেন সাদেক বাচ্চু।
১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রামের সুমতি’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন সাদেক বাচ্চু। তিনি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।