আইয়ুব বাচ্চু ‘আমাদের বিস্ময়’

Looks like you've blocked notifications!
বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও গিটারবাদক আইয়ুব বাচ্চু। ছবি : এনটিভি অনলাইন

বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও গিটারবাদক আইয়ুব বাচ্চুর ৫৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। সাতাশ বছরের ব্যান্ড সংগীত ক্যারিয়ারে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা গিটারবাদক।

চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া আইয়ুব বাচ্চু সফল সংগীতজীবনে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিলেন অনেক আগেই। তাঁর কীর্তিময়, কর্মমুখর জীবন তাঁকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিচিতিও।

আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ইসহাক চৌধুরী ও মায়ের নাম নুরজাহান বেগম। বাচ্চুর শৈশব কাটে চট্টগ্রামেই। রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হওয়ায় সংগীতকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে বেশ বেগ পোহাতে হয় তাঁকে।

চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় তাঁর। কৈশোরেই ব্রিটিশ ও আমেরিকান রক সংগীত শুনতে শুরু করেন বাচ্চু। সেই থেকে এই ধারার সংগীতের প্রতি অনুরক্ত হন তিনি। তাঁর প্রথম ব্যান্ডের নাম ‘সোলস’। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ওই ব্যান্ডে যোগ দেন তিনি। ‘হারানো বিকেলের গল্প’ শিরোনামের গানে প্রথম কণ্ঠ দেন বাচ্চু। শহীদ মাহমুদ জঙ্গি লিখেছিলেন গানটি।

আশি দশকের শুরুর দিকেই ব্যান্ডদল ‘সোলস’-এ যোগ দেন তিনি। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ‘সোলস’-এ থেকেই শ্রোতাদের হৃদয়ে একের পর এক আঁচড় কেটেছেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ মুক্তি পায়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’।

বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও গিটারবাদক আইয়ুব বাচ্চু। ছবি : এনটিভি অনলাইন

১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু হয় আইয়ুব বাচ্চুর নিজের ব্যান্ডদল। তবে শুরুতে এর নাম এলআরবি নয়, বরং Yellow River Band (ওয়াইআরবি) ছিল। এই দল গঠনের কয়েক দিন পরে বিদেশে একবার অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন বাচ্চু। উদ্যোক্তারা ভুলক্রমে তাঁর ব্যান্ডের নাম লেখেন Little River Band বা এলআরবি ৷ ভুল হলেও নামটা পছন্দ হয় আইয়ুব বাচ্চুর। ওই নামটিই রেখে দেওয়া হয়। ব্যান্ড পরিচিত হয় এলআরবি নামে।

বেশ চলছিল; কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, ওই নামে অস্ট্রেলিয়াতে একটি ব্যান্ড রয়েছে। তবে এলআরবির জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। ফলে আবারও নাম পরিবর্তনের পথে হাঁটেননি বাচ্চু। বরং এলআরবির নতুন অর্থ দাঁড়ায় ‘লাভ রানস্ ব্লাইন্ড’-এ। এর পরের গল্প কেবলই ইতিহাস সৃষ্টির। বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম ‘এলআরবি-১’ ও ‘এলআরবি-২’ মুক্তি পায় তাঁরই হাত ধরে।

তাঁর ব্যান্ড অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এলআরবি’, ‘সুখ’, ‘তবুও’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘ফেরারী মন’, ‘স্বপ্ন’, ‘আমাদের বিস্ময়’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নেই’, ‘স্পর্শ’, ‘যুদ্ধ’।

বেশ কিছু জনপ্রিয় একক অ্যালবামও উপহার দেন বাচ্চু। এর মধ্যে ‘রক্তগোলাপ’, ‘ময়না’, ‘কষ্ট’, ‘সময়’, ‘একা’, ‘প্রেম তুমি কি!’, ‘দুটি মন’, ‘কাফেলা’, ‘প্রেম প্রেমের মতো’, ‘পথের গান’, ‘ভাটির টানে মাটির গানে’, ‘জীবন’, ‘বলিনি কখনো’, ‘জীবনের গল্প’ উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া বিভিন্ন কনসার্টে গান গাইতে দেখা যেত তুমুল জনপ্রিয় এই তারকাকে। বিভিন্ন রিয়েলিটি শোর বিচারক হিসেবেও অংশ নিতে দেখা যেত আইয়ুব বাচ্চুকে। আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রীর নাম ফেরদৌস চন্দনা। বাচ্চু-চন্দনা দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় পুত্র ফাইরুজ ও কন্যা তাজওয়ার।

২০০৯ সালে হার্টে রিং পরানো হয়েছিল আইয়ুব বাচ্চুর। ফুসফুসে পানি জমায় ২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সুস্থ হয়ে সংগীত অঙ্গনে ফিরে এসে আবারও কাজ শুরু করেন। তবে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর রংপুর জিলা স্কুলে ‘শেকড়ের সন্ধানে’ শিরোনামে একটি কনসার্টের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরেই অসুস্থতা বোধ করেন বাচ্চু। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বাংলা সংগীত জগতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্র।

জন্মবার্ষিকীতে আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সংগীতপ্রেমীরা।