বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের স্রষ্টা বরেণ্য সুরকার আলাউদ্দিন আলী। বহু হৃদয়গ্রাহী দেশাত্মবোধক গানের সুরস্রষ্টা তিনি। প্রয়াত এ সংগীতজ্ঞকে নিবেদন করে এনটিভি আয়োজন করেছে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানের। 

আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) রাত ১১টা ৩০ মিনিটে এনটিভির নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘মিউজিক অ্যান্ড রিদম’-এ আলাউদ্দিন আলীকে উৎসর্গ করে গাইবেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাদশা বুলবুল। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করছেন কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা ও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করবেন ফারজানা বীথি। 

আজ মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে কাজী মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের একজন আলাউদ্দিন আলী ছিলেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এমন মহান সুরস্রষ্টাকে স্মরণ করে আমরা এবারের অনুষ্ঠান সাজিয়েছি। উনার কিছু গান দিয়েই আমরা সাজাচ্ছি এবারের আয়োজন। আমাদের দেশের আরেক গুণী শিল্পী বাদশা বুলবুল ভাই আলাউদ্দিন আলীর বেশ কিছু গান গেয়ে শোনাবেন।’

গতকাল সোমবার রাজধানীর মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলীকে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ জোহর খিলগাঁওয়ের তালতলা মসজিদের সামনে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। দুপুর আড়াইটায় এফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

বাংলা গানের বিশিষ্ট সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী গত রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মারা যান।

শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে শনিবার‍ ভোরে তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দিন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছিল প্রায় চার দশক। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত ও পাকিস্তানের অনেক স্বনামধন্য শিল্পী তাঁর সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।

অগণিত জনপ্রিয় গানের প্রখ্যাত এই সুরকার  ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। ২০১৫ সালের ৩ জুলাই আলাউদ্দিন আলীকে প্রথম ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁর ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল। এর আগে বেশ কয়েক দফায় তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।

আলাউদ্দিন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান সৃষ্টি করেছেন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।

এ পর্যন্ত আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আলাউদ্দিন আলী। তাঁর সুর করা গানের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। তাঁর কালজয়ী গানের অন্যতম—ও আমার বাংলা মা তোর, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না, যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, এমনও তো প্রেম হয় প্রভৃতি।