এখন দেখছি না খেয়েই মরতে হবে : কাঙ্গালিনী সুফিয়া
একদিকে চরম অর্থাভাব অন্যদিকে মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতা। সেইসঙ্গে করোনা মহামারির মধ্যে বন্যায় পানিবন্দি। সব মিলিয়ে ভালো নেই লোক গানের কিংবদন্তি শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
ঢাকার সাভারের জামসিং এলাকায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’-এর মতো জনপ্রিয় অসংখ্য গানের এই শিল্পী।
নিজেই জানালেন তাঁর দুঃখ দুর্দশার কথা। বন্যার কারণে সড়ক ডুবে যাওয়ায় কার্যত পানিবন্দি এই শিল্পী। তার ওপর নিত্য অভাবে তিনবেলা আহার জোটানো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাঙ্গালিনী সুফিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে পাঠানো হলেও মাসে ওষুধ লাগে ১৪ হাজার টাকার।
‘করোনায় দিনগুলো খুবই অমানবিক যাচ্ছে। আজ ঈদের দিন। ভালোমন্দ কিছুই কারো মুখে তুলে দিতে পারিনি। সংসার-সন্তানদের নিয়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছি।’ আক্ষেপ ঝরে শিল্পীর কণ্ঠে।
অনুযোগ করে কাঙ্গালিনী সুফিয়া বলেন, ‘এই করোনায় কীভাবে আমি বাঁচব সন্তানদের নিয়া। এক টাকা আয় নাই। আজ ঈদের দিন। অর্থের অভাবে সেমাই, চিনি ও মাংস কিনতে পারিনি। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিনে। কুষ্টিয়াও যেতে পারছিনে। করোনা তো আমারে মারতে পারবে না, এখন দেখছি না খেয়েই মরতে হবে। অভাব আর দারিদ্র্য একেবারে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। পারলে আমার দুর্দশার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। নিশ্চয়ই তিনি আমার জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসবেন। আরেকটি কথা, মৃত্যুর আগে হলেও আরেকটিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করে সামনাসামনি তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’
সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জামসিং এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন মোল্ল্যা বলেন, ‘কাঙ্গালিনী সুফিয়া আমাদের দেশের সংস্কৃতি জগতের এক অলঙ্কার। গুণী এই শিল্পী চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। পরিস্থিতি এখন এতটা খারাপ যে নিজের পেট চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাঁর বয়স হয়েছে। বিত্তবানদের কেউ কেউ এগিয়ে এলে অন্তত মৃত্যুর আগে একটু সম্মান নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের লোকসংগীতের এক আবেগের নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া। তাঁর প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ‘কোন বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’, ‘পরানের বান্ধব রে’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’ এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গান দিয়ে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছেন তিনি।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে গ্রামীণ অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। পেয়েছেন ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তবে অর্থের অভাব কাটেনি কখনোই। অবশ্য শিল্পী নিজেও ছোটেননি অর্থের পেছনে। সারা জীবন শুধু গানই গেয়েছেন। মানুষকে সুরের খোরাক দিতে ছুটেছেন পথ থেকে পথে। গান গেয়ে অর্থ উপার্জন কখনোই মুখ্য বিষয় ছিল না তাঁর কাছে। ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটি এখনো বেঁচে আছেন সংগীতকে সঙ্গী করেই। সঙ্গে রয়েছে অভাব আর মারাত্মক রোগ ব্যাধির নিদারুণ কষ্ট।