করোনার প্রভাব কাটলেই দেশে ফিরবেন এন্ড্রু কিশোর

Looks like you've blocked notifications!

দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী এন্ড্র কিশোর। দীর্ঘদিন ধরেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে অনেকটাই ভালো আছেন তিনি। চলতি মাসেই দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁর। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এখনই দেশে ফেরা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁর শিষ্য ও সংগীতশিল্পী মোমিন বিশ্বাস। করোনার প্রভাব কাটলেই দেশে ফিরবেন এন্ড্রু কিশোর এমনটিই জানিয়েছেন তিনি।

গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ক্যান্সারে (নন-হজকিন লিম্ফোমা) আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আছেন দেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। দীর্ঘদিন চিকিৎসার গ্রহণের পর বেশ ভালো আছেন এই সংগীত শিল্পী।

মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘দাদার শারীরিক অবস্থান উন্নতির দিকে। মাঝেমধ্যে জ্বর আসছিল তাঁর। এখন তাও কমেছে। চলতি মাসেই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার কথা ছিল। সিঙ্গাপুর থেকে দাদার পরিবার দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তকে করোনাভাইরাসের কারণে এখনই দেশে  ফেরা হচ্ছে না। সব কিছু স্বাভাবিক হলেই দেশে ফিরবেন দাদা।’ 

ফেব্রুয়ারি মাসে এন্ড্রু কিশোরের সম্মানে এক কনসার্টের আয়োজন করা হয় সিঙ্গাপুরের জালান বুকিত মেরাহর গেটওয়ে থিয়েটারে। সেখানে গান গেয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, মিতালী মুখার্জি ও এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য মোমিন বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। অসুস্থ শরীর নিয়েও গান গেয়ে দর্শক শ্রোতাদের অন্যরকম আবেগে ভাসিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে গিয়ে কেঁদেছেন অনেক ভক্তও।

কনসার্টের শিরোনাম ছিল ‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’।

কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এন্ড্রু কিশোর। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থেকেই থেমে থেমে তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছিল। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত এই শিল্পী সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা চালানোর জন্য গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে নিজের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন। ক্যানসার ধরা পড়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চিকিৎসার জন্য তিনি কারো কাছে হাত পাতবেন না। তাই রাজশাহী শহরে ভদ্রা আবাসিক এলাকায় পাঁচ বছর আগে কেনা ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন।

বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাঁকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তাঁর।

এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সংগীতের পাঠ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন এন্ড্র কিশোর। তাঁর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তাঁর গান শোনেন এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৮৭ সালে এন্ড্রু কিশোর আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টুর সঙ্গে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য প্রবাহ নামে একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক।