কারাগারে সাংবাদিক রোজিনা : অন্তর্জালে শোবিজ তারকাদের প্রতিবাদ
দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তার পর অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোয় দেশের বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। অন্তর্জালে সেই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন দেশের শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় সব তারকা। শুধু তারকারা নন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিপীড়নের ঘটনায় সিনেমা ও টেলিভিশনের একাধিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এমন ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, প্রশ্ন তুলেছেন দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রতিবাদ জানিয়ে শাকিব খান লিখেছেন, ‘দুদিন ধরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের কয়েকটি স্থিরচিত্র দেখছি আর বিস্মিত হচ্ছি। দেশ ও বিশ্ব গণমাধ্যমে তাঁকে ঘিরে তৈরি প্রতিবেদনগুলো পড়ছি আর ভাবছি, আমার সোনার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে!’
শাকিব খান আরও লিখেছেন, ‘একজন সৎ সংবাদকর্মী তো কখনোই রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ নন। বরং তিনি সমাজ তথা দেশের দর্পণ হিসেবে কাজ করেন। দেশের উজ্জ্বলতম অনুসন্ধানী সাংবাদিকের এমন দশায় উদ্বিগ্ন হই, মনটা ভারাক্রান্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে সাংবাদিকতা করে রোজিনা ইসলাম দেশে ও দেশের বাইরে থেকে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এ পর্যন্ত তিনি যেসব অসংগতি, দুর্নীতি জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন, সেগুলোর সবই কাঠখড় পুড়িয়ে বের করে আনা তথ্য; যা বস্তুনিষ্ঠ এবং জনগণের মঙ্গলময়। কিন্তু সুসাংবাদিকতা করতে গিয়ে রোজিনা ইসলাম যেভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন তা মোটেও কাম্য নয়। এতে করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে রোজিনা ইসলাম যেন শতভাগ ন্যায়বিচার পান সেই কামনা করছি।’
ফেসবুকে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘কালকের ঘটনাটার মাঝে একধরনের মাস্তানির ভাব আছে! সাংবাদিক সমাজের উচিত এই বাড়াবাড়ি বা মাস্তানির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সবার বিচার নিশ্চিত করতে সোচ্চার থাকা এবং রুটিন করে আগামী এক মাস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে আরও বেশি বেশি রিপোর্ট করা! যা তারা থামাতে চেয়েছে, তাকেই আরও জ্বালিয়ে দেওয়াই হবে আসল উত্তর!’
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘করোনার কারণে আমরা যে মুখোশ পরা শুরু করেছি, সেই অভ্যাসটা থাকুক। কিন্তু আসুন, আসল মুখোশটা খুলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। দৃপ্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলি, “রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই”।’
গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘বাঘিনী, এই মুহূর্তে তোমার মুক্তি চাই না। তুমি একটি উপলক্ষ মাত্র। তোমার মাধ্যমেই স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী-আমলা ধ্বংস হবে, মাথা উঁচু করে থাকো আর চিৎকার করে গাও : তোমরা বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্বগ্রাস, আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস। সেই ভয়-দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান লিখেছেন, ‘রোজিনা সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন, সিঁধ কাটতে নয়। দেখতে পেলাম হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন। এই আমাদের আচরণ! এই আমাদের সভ্যতা! রোজিনার গলার ওপর চেপে বসা আঙুলগুলো গভীর অর্থময় এক প্রতীকের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে, আঙুলগুলো কোনো ব্যক্তির গলায় নয়, বরং বাংলাদেশের বাক্স্বাধীনতার কণ্ঠনালিতে চেপে বসেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই এমন অশুভ একটি ঘটনা আমাদের দেখতে হলো? রোজিনাকে তাঁর পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
দেশের শোবিজ তারকাদের অন্তর্জালজুড়ে রীতিমতো ঝড় বইছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে। সেই তালিকায় আছেন নায়ক ওমর সানী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার, নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, নাট্যনির্মাতা আশফাক নিপুন, রেদওয়ান রনি, অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, কণ্ঠশিল্পী বেলাল খান, চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর দীপন, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত, নাট্যকার মাসুম রেজা,অভিনেত্রী তানভীন সুইটি, কণ্ঠশিল্পী কোনাল, অভিনেতা সাজু খাদেম, অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ, আবু শাহেদ ইমন, দীপু হাজরা, রায়হান জুয়েল, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, মেহের আফরোজ শাওন, ভাবনা, ইমন, মৌটুসী বিশ্বাস, শরিফুল রাজ, রাশেদ মামুন অপু, খায়রুল বাসার, ইমতিয়াজ বর্ষন, কণ্ঠশিল্পী এলিটা করিমসহ শতাধিক শোবিজ তারকা।
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে ৯টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
গভীর রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয় নথি চুরির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং ওই নথি দ্বারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।