চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের জন্য স্ত্রী-সন্তান থেকে দূরে মিশা
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বিশ্বময়। সবার মতোই ঢাকায় নিজের ঘরে অবস্থান করছেন শক্তিমান অভিনেতা মিশা সওদাগর। অন্যদিকে স্ত্রী মিতু দুই সন্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে স্ত্রী-সন্তান থেকে দূরে আছেন বলে জানিয়েছেন মিশা।
মিশা-মিতু দম্পতির বড় ছেলে ওয়ালিদ হাসান যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। সময় পেলেই স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এই অভিনেতা। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরেন মিশা সওদাগর।
এনটিভি অনলাইনকে মিশা সওদাগর বলেন, ‘ঈদে আমার কয়েকটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। মুক্তির আগে ছবির কিছু কাজ থাকে, যেখানে শিল্পীকে প্রয়োজন হয়। মার্চে নতুন ছবির শুটিংও শুরু হওয়ার কথা ছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসি। করোনা শুরু হওয়ার পর সবই বন্ধ হয়ে যায়। ইচ্ছে করলে লকডাউনের আগেই স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফিরতে পারতাম। তবে চলচ্চিত্র আর শিল্পীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আর তাদের কাছে যাওয়া হয়নি। আজ তারা পৃথিবীর এক প্রান্তে, আমি আরেক প্রান্তে।’
মিশা বলেন, ‘আমি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সাধারণ শিল্পীদের প্রতি আমায় দায় রয়েছে। দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে মন্দাভাব। করোনার কারণে নিম্ন আয়ের শিল্পীরা অনেক কষ্টে আছে। সমিতির পক্ষ থেকে যথাসাধ্য তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। সচ্ছল শিল্পীদের কাছে হাত পেতে অসচ্ছল শিল্পীদের বাসায় খাবার পাঠাচ্ছি। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী করে যাচ্ছি সবার জন্য। এদের কথা চিন্তা করে আর স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়া হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রে কেমন আছেন তাঁরা, জানতে চাইলে মিশা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সবাই ভালো আছে। এখন ছেলের স্কুল বন্ধ। যে কারণে বাসায় আছে সবাই। অনলাইনে কথা হয় সারা দিনই। তারাও আমার খবর রাখছে। আসলে প্রতিটি কাজের ফাঁকে আমি একবার করে তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চলে যাই। এতটা সময় আমার একা থাকা হয় না। আমার ক্যারিয়ারের দুই যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে আমি কখনো তাদের ছাড়া ঈদও করিনি। এবারই প্রথম। এজন্য একটু কষ্টও লেগেছে। তবে করোনার প্রকোপ কমলে, আবারও ফ্লাইট শুরু হলে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাব অথবা তারাই দেশে চলে আসবে।’
মিশা আরো বলেন, ‘শুধু আমার নিজের পরিবারের জন্য নয়, কষ্ট হচ্ছে আমাদের মতো হাজারো পরিবারের জন্য। আমার মতো এমন হাজারো মানুষ আছে, যাদের পরিবার বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছে। আবার যারা অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে, তাদের জন্য কষ্ট হয়। কারণ তারাও তো নিজের পরিবার দেশে রেখে একটু সুখে থাকার জন্য বিদেশ পাড়ি দিয়েছে।’
সবার জন্য দোয়া চেয়ে মিশা বলেন, ‘আপনারা সবার জন্য দোয়া করবেন, যারা যেখানে আছে, সবাই যেন ভালো থাকে। খবরে পড়েছি, অনেক প্রবাসী মারা গেছে, তাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আপনারা সবাই বাসায় থাকবেন, নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখবেন।’
মিশা সওদাগর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ ও ‘অমরসঙ্গী’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। পরে তমিজ উদ্দিন রিজভী পরিচালিত ‘আশা ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন।
খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে মিশা ‘বস নাম্বার ওয়ান’ (২০১১) ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ খলচরিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
এ ছাড়া মিশা ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ (২০১৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনয়শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।