চিরঘুমে এ টি এম শামসুজ্জামান
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/20/atm_last_cover.jpg)
বেঁচে থাকতে একাধিকবার নিজের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। সেসব খবর শুনে হয়তো মন খারাপ করেছেন। অভিমান জমে ছিল হয়তো মনের এককোণে। এ প্রসঙ্গে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বরেণ্য এই অভিনেতা যেটা বলেছিলেন, সেটা ব্যাখ্যা করলে ভাষ্যটা এমন হবে, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে মেরে ফেলেছ, অন্তত ২০ বার তো হবেই; তাতে আমার ক্ষতি নেই। তবে যেদিন সত্যি সত্যি চলে যাব, সেদিন আর আটকিয়ে রাখতে পারবে না। পারলে সেদিন বেঁচে থাকার গুজবটা ছড়িয়ে দিও।’
আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে সত্যিই আটকে রাখা গেল না এ টি এম শামসুজ্জামানকে। প্রতিবারের মতো এবার আর গুজব বলেও উড়িয়ে দেওয়া গেল না তাঁর মৃত্যুর খবর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিনেতার ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করে জানালেন, তাঁর বড় ভাই মারা গেছেন।
এরপর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় নারিন্দার পীর সাহেব বাড়ি মাজারে। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বরেণ্য অভিনেতার মরদেহ রাখা হয়। সেখানে উপস্থিত হন বিনোদন অঙ্গনের অনেকেই। শেষবার বিদায় জানিয়ে যান এ টি এম শামসুজ্জামানকে। যদিও সিনেমার আঁতুড়ঘর বিএফডিসিতে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয়নি।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/20/atm_2_0.jpg)
বাদ আসর সূত্রাপুর জামে মসজিদে এ টি এম শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় এই অভিনেতাকে।
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন একাধারে পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। অভিনয়ের জন্য একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক।
এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন পুরান ঢাকার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্রজীবনের শুরু ১৯৬১ সালে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ওই চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান।
প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার গ্রহণ করেন।