‘ডন’ পত্রিকার বিজ্ঞাপন থেকে শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিক
বরেণ্য অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। এসব পরিচয়ের বাইরে তাঁর অন্য আরো একটি পরিচিতি আছে। তিনি ছিলেন দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি’র কর্ণধার ছিলেন আলী যাকের।
কীভাবে এই বিজ্ঞাপন জাগতে পা রেখেছিলেন আলী যাকের? ২০১৫ সালে এনটিভিকে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সে গল্প। আলী যাকের বলেন, “ইউনিভার্সিটি যখন পাস করলাম, আমার বড় ভাই (ভাইয়া), তখন পিএইএ-তে চাকরি করতেন। আমাকে একটা ওয়ান-ওয়ে টিকেট দিলেন। দিয়ে বললেন, ‘করাচি যা’। করাচিতে গেলাম, আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বাসায় উঠলাম। শহরটা ভালো লাগলো, ঘুরে ঘুরে বেড়াই। তো একদিন ‘ডন’ পত্রিকায় দেখলাম একটা বিজ্ঞাপন। তখনকার দিনে একটা জিনিস চালু ছিল ওয়াক-ইন ইন্টারভিউ (কোনো ধরনের আবেদন করা ছাড়াই সরাসরি গিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়া)। ক্রফটস বলে ব্রিটিশ একটা এজেন্সি, সেখানে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম।”
সেই গল্পে আলী যাকের আরো জানিয়েছিলেন, “আমাকে বলা হলো, ‘এই এক পাতার মধ্যে একটা এসে (রচনা) লিখো। কী সাবজেক্ট দিয়েছিল মনে নেই। আমি লিখলাম। আমাকে বলল, ‘বসো’। বসে আছি, ডাক পড়ল ওখানে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ঘরে। ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্কটিশ ভদ্রলোক। উনি আমাকে দু-চারটে প্রশ্ন করার পর বললেন, ‘ইউ আর অন’। আধুনিক ইংরেজিটা তখনো বুঝিনি। আমি বললাম, ‘স্যার হোয়াট ডু ইউ মিন?’ উনি বললেন, ‘ইউ গট দ্য জব’। ওই আমার জীবন, এরপর বিজ্ঞাপনের জগতে (কাজ করা) শুরু হয়ে গেল...।”
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি’ ১৯৬৬ সালের ১৫ এপ্রিল ইস্ট এশিয়াটিক নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৪ সালে এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লি.-এ রূপান্তরিত হয়।
দীর্ঘ চার বছর ক্যানসারে আক্রান্ত আলী যাকের রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আজ শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ৭৬ বছর বয়সী বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের।১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক পাস করে নটরডেমে ভর্তি হন আলী যাকের। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। এরপর সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। অনার্স পড়াকালেই ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন।
আলী যাকের তাঁর অভিনয়জীবন শুরু করেন ১৯৭২ সালে। আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে। এরপর জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বহুব্রীহি’ ও ‘আজ রবিবার’-এ অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন এই গুণীজন। আলী যাকের ১৯৭৫ সালে অভিনেত্রী সারা যাকেরকে বিয়ে করেন।