তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্থগিত হলো এফডিসির বাড়তি চার্জ
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হস্তক্ষেপে অবশেষে স্থগিত হলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন নির্ধারিত (বিএফডিসি) শুটিং ফ্লোর, ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের বাড়তি চার্জ।
নির্মাণব্যয় বেশি হওয়ার কারণে কমেছে এফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ। তবে বাইরে থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেও এফডিসি থেকে নিতে হয় এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট)। আগে এনওসির জন্য প্রযোজককে দিতে হতো ১০ হাজার টাকা। কিন্তু মাঝে হঠাৎ সেই ফি বাড়িয়ে একলাফে করা হয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। বিষয়টি জানার পর চটেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এক সভা শেষে আগে নির্ধারিত ফিতে ফিরে যেতে বলেছেন তিনি।
গত ১৩ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সরঞ্জামের ওপর চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এনওসি নিতেও ফি করা হয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা।
তবে বিএফডিসির চার্জ বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত জানতেন না তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও তথ্য সচিব কামরুন নাহার। গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভা শেষে এমনটাই জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম। সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা সভায় অংশ নেন।
এর আগে বিএফডিসির বিভিন্ন ফ্লোর, অফিস রুম ও খোলা জায়গা দুভাবে চার্জ করা হয়—সেট নির্মাণকালীন ও শুটিং চলাকালীন। সেট নির্মাণকালে খালি জায়গা ও ছাদ, সুইমিংপুলের ভাড়া ছিল ১০০০ থেকে ২৮০০ টাকা, ফ্লোরের ভাড়া ছিল ২৫৫০ থেকে ৫১০০ টাকা পর্যন্ত। ক্যামেরা চার্জ ছিল শিফট প্রতি ৬১২০ টাকা থেকে ৬৬৩০ টাকা।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শুটিং চলাকালে চার্জ খালি জায়গা ও ছাদ, সুইমিং পুল ২০০০ থেকে ৩৩০০ টাকা, ফ্লোর ৬৫০০ থেকে ১৮৫৪০ টাকা পর্যন্ত। এ চার্জ করা হয় প্রতি শিফটে। প্রতি শিফট গণনা করা হয় ৮ ঘণ্টা হিসেবে। একদিনে দুই শিফট। আবার রাত ১১টার পর চার্জ বাড়ানো হয় দ্বিগুণ।
এর আগে বিনামূল্যে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) ও যন্ত্রপাতির ফি অর্ধেক করার জন্য সমিতি থেকে অনুরোধ করা হলেও বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে বলে কথা দিয়েও তা রক্ষা করেননি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের সাবেক এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) আবদুল করিম। এমনটাই দাবি করেন প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিমুল্লাহ খোকন।
সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি থেকে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং তথ্য সচিব মহোদয়ের সঙ্গে বসেছি। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের চলচ্চিত্র আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। তবে অবাক লাগে—এফডিসিতে সিনেমা হচ্ছে কম, যেখানে সব ধরনের খরচ কমানো উচিত, সেখানে সব ধরনের খরচ বেড়েছে। অথচ বিষয়গুলো মন্ত্রী বা সচিব মহোদয় কিছুই জানতেন না। আমাদের কাছ থেকে শুনে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
শামসুল আলম আরো বলেন, ‘যেখানে আগে এনওসি নিতে ১০ হাজার টাকা লাগত, কিছুদিন ধরে তা এক লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। যন্ত্রপাতির দাম অর্ধেক করার জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, সেখানে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এগুলো অনিয়ম, কারণ মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে কিছুই জানে না। ’
আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘মন্ত্রী ও সচিব মহোদয় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এফডিসির সব অনিয়ম দূর হবে। এখনই যদি এসব কার্যকর না হয়, তবে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প ধ্বংস হতে সময় লাগবে না।’
এ প্রসঙ্গে এফডিসির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুজহাত ইয়াসমিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে এখানে যোগ দিয়েছি। যে কারণে সব কিছু এখনো জানি না। চলচ্চিত্র নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্যই এই বিএফডিসি। আমরা চলচ্চিত্রের স্বার্থে সব ধরনের সুযোগ প্রতিষ্ঠা করব, ইনশা আল্লাহ।’