বাবা আমার বাবা
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বের অনেক দেশে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও দিনটি উদযাপন হচ্ছে। বাবার সঙ্গে সখ্য, তাঁর ভালোবাসাসহ বাবার স্মৃতিচারণা করছেন অনেকে। আজ এ বিশেষ দিনে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের গুণী অভিনেত্রী-সহোদর ববিতা ও চম্পা।
স্মৃতিচারণা করে এনটিভি অনলাইনকে চম্পা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার পুতুল খেলার খুব শখ ছিল। আরেকটি শখ ছিল, সেটি হচ্ছে মানুষকে অনুকরণ করা। একদিন হলো কি, আমি ববিতা আপা, সুচন্দা আপাসহ সবাই বসে আছি। আমি হুট করে বাবাকে অনুকরণ করে অভিনয় করে দেখাচ্ছিলাম—বাবা কীভাবে কথা বলেন, কী বলেন আমাদের সঙ্গে। সবাই বিষয়গুলো দেখে আনন্দ পাচ্ছিল। অভিনয় শেষ করে দরজা খুলে দেখি বাবা দরজার বাইরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রথমে দেখলাম বাবার কঠিন চেহারা। পরে দেখি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বড় হয়ে বুঝেছি সেই অনুকরণই আমার অভিনয়ের হাতেখড়ি।’
ববিতা বলেন, ‘আব্বা কিন্তু আমাকে দিয়ে অভিনয়ও করিয়েছিলেন। আব্বা সব সময় সিনেমা দেখতেন, সেই সিনেমা থেকে আমাদের মজার মজার গল্প করে শোনাতেন। শুধু তা-ই নয়, গল্পের সেই চরিত্রগুলো আমাদের দিয়ে অভিনয় করতে বলতেন। সেখান থেকেই অভিনয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তবে আব্বা একটা বিষয়ে অনেক কঠোর ছিলেন। সেটি হচ্ছে সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে বাসায় থাকতে হবে।’
চম্পা বলেন, ‘আমি তো একদিন আব্বার কাছে বকা শুনেছিলাম সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকার জন্য। আসলে হয়েছিল কি, আমি তো আগেই বলেছি পুতুল খেলার শখ ছিল আমার। একদিন পাশের বাড়িতে পুতুল খেলছিলাম। সেখানে পুতুলের বিয়ে দিলাম। কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। অনেক ভয়ে-ভয়ে বাসায় এসে দেখি আব্বা বারান্দায় পায়চারি করছেন। আমাকে এমন ধমক দিলেন, এখনো মাঝে মাঝে সেই ধমকের কথা আমার মনে পড়লে ভয় পেয়ে উঠি।’
ববিতা বলেন, ‘আব্বা যে শুধু শাসন করতেন তা নয়, আমাদের প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। সব সময় না, তবে আব্বা বাসায় মাঝে মাঝে পান খেতেন। আমরা আব্বাকে পান বানিয়ে দিতাম। আব্বা পানটি অনেক আয়েশ করে খেতেন। আব্বার কাছে কিছু চাওয়ার হলে তখন তাঁর পা টেপা শুরু করতাম আর নিজেদের আবদারগুলো বলতাম। আব্বা সেই আবদারগুলো অনেক ভালোবাসার সঙ্গে পূরণ করতেন। আমাদের কোনো বিষয়ে ভুল হলে তা বুঝিয়ে বলতেন।’
চম্পা বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক বড় অপরাধ করলেও আব্বা অনেক সময় ধমক বা শাসন না করে বুঝিয়ে বলতেন। যেমন, একদিন আমার পুতুলের নতুন কাপড় দরকার ছিল। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ছাদে গিয়ে দেখি সুচন্দা আর ববিতা আপার নতুন কাপড় রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। আমি দুজনের কাপড় থেকে দুই টুকরো কাপড় নিলাম, কাপড় থেকে পুঁতি-জরি খুলে নিলাম। তারপর পুতুলের জন্য নতুন জামা বানালাম। সন্ধ্যায় আব্বা বাসায় ফিরে আমাকে ডাকলেন। গিয়ে দেখি আপারা সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো দেখেই বুঝেছি কী হয়েছে। আমার বুক কাঁপছিল। মনে হচ্ছে আব্বা এখনই আমাকে ধমক দেবেন, শাসন করবেন। পরে দেখি আব্বা এসব কিছুই করেননি। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আর বুঝিয়ে বললেন। তারপর কোনোদিন নতুন কাপড় দিয়ে পুতুলের জামা বানাইনি। বরং আপারাই আমাকে পুতুলের জামা বানানোর জন্য কাপড় দিতেন।’
বড় বোন সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে। এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।
চম্পা প্রথমে মডেলিংয়ের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর টিভি নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয় হন। শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘তিন কন্যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চম্পা চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করেন। এই চলচ্চিত্রে তাঁরা তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা একত্রে অভিনয় করেন।