বাস্তব আর পর্দার মায়ের মধ্যে পার্থক্য দেখি না : আনোয়ারা
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী আনোয়ারা মাত্র ১৪ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। নায়িকা হিসেবে রয়েছে সাফল্য। বর্তমানে বেশিরভাগ মায়ের চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। তবে ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে কাজ করাটা খুব বেশি সুখকর ছিল না তাঁর। সফলতার পেছনে মায়েরই বা কতটা ভূমিকা ছিল, তা জানালেন অভিনয়শিল্পী নিজেই।
অভিনেত্রী আনোয়ারা বলেন, ‘আমি বাস্তব জীবন আর পর্দার যে মা, তার মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য পাই না। কারণ বাস্তব জীবনে মেয়ের জ্বর হলে আমার টেনশন হয়, ক্যামেরার সামনেও তাই হয়। ক্যামেরার সামনে যখন দাঁড়াই, তখন মনে হয় আমি ওদেরই মা। তাদের কষ্টে কাঁদি, তাদের আনন্দে হাসি।’
আনোয়ারা আরো বলেন, ‘তবে বাস্তব জীবনে মায়ের চেয়ে আমি পর্দায় বেশি সার্থক, পরিচালক সব সময় আমাদের জিতিয়ে দেন। গল্পের শেষে জয় আমারই হয়, তবে বাস্তবতা ঠিক তেমন নয়। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমি বোধহয় পরিবারের সব দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারছি না।’
চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশে মায়ের ভূমিকা নিয়ে আনোয়ারা বলেন, ‘এখন তো চলচ্চিত্রে অনেক মেয়েই অভিনয় করছে। অনেক মেয়েই নায়িকা হচ্ছে, কারণ এটি তার মায়ের ইচ্ছে। সব সময় দেখি মা মেয়েকে আগলে রাখে। আমার বেলায় এতটা সুখকর ছিল না। আমি যখন চলচ্চিত্র শুরু করি, তখন চলচ্চিত্রে কাজ করাটা অনেক পরিবার থেকেই মেনে নিত না। ঠিক তেমনি আমার মাও চায়নি আমি চলচ্চিত্রে কাজ করি। অনেকটা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জেদ করেই কাজ শুরু করি। তবে কাজ শুরু করার পর মা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। একসময় এসে মনে হতো, মায়ের জন্যই আমি চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারছি। আমার সাফল্যে মায়ের ভূমিকা অনেক। কয়েক বছর আগে মা মারা যান। এখন আমারও বয়স হয়েছে। যেকোনো দিন চলে যাব। সবাই দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য। আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন সুস্থ থাকতে পারি।’
ষাটের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে আনোয়ারা আসেন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৬১ সালে ১৪-১৫ বছর বয়সে ফজলুল হকের ‘আজান’ চলচ্চিত্রে প্রথম নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘নাচঘর’। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি মোট ১৯টি চলচ্চিত্রে বিভিন্ন পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বালা নামের একটি চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আনোয়ারার তিনটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ১৯৮২ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দেবদাস’ ও ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শুভদা’। তিনি মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন।