ব্যান্ড মিস করলেও স্বাধীনতা উপভোগ করছেন পিন্টু ঘোষ

Looks like you've blocked notifications!
সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী পিন্টু ঘোষ। ছবি : সংগৃহীত

১০ বছরের বেশি সময় কাজ করা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘চিরকুট’ ছেড়ে দিয়েছিলেন পিন্টু ঘোষ। সাল তারিখটা ২০১৭, ১৬ নভেম্বর। এরপর গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক আর সংগীতশিল্পী হিসেবে নিজেই একক ক্যারিয়ার গড়েছেন। একাধিক সিনেমায় সুর ও সংগীত পরিচালনা করে এসেছেন আলোচনায়। দেশের আলোচিত নির্মাতা তৌকীর আহমেদের সবশেষ চার সিনেমার সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।

তবে এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পিন্টুর সৃষ্টি সেরা গান ‘একটা ছেঁড়া দিন’, যেটি স্থান পেয়েছে চিরকুটের দ্বিতীয় অ্যালবামে। রাজধানীর বনানী ক্লাবে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে এক আড্ডায় এমনটি জানিয়েছেন পিন্টু ঘোষ।

আড্ডায় পিন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ব্যান্ড মিউজিক ছেড়ে সিনেমার গান করছেন, দুই মাধ্যমে গানের পার্থক্যটা কী আসলে। পিন্টু ঘোষ পার্থক্যটা ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘সিনেমার মিউজিক হচ্ছে সিনেমার গল্পকে সাহায্য করার জন্য যে আবহটা দরকার। আর ব্যান্ড মিউজিক যাঁরা করেন, উনাদের একটা মেন্টাল স্ট্যাটাস থাকে। সবাই একই রকমের মত প্রকাশ করেন, একই রকম টেস্ট প্রকাশ করেন। কিন্তু সিনেমাতে কোনো ব্যক্তিগত মত প্রকাশের সুযোগ থাকে না, গল্পে যদি হাসি থাকে, ব্যক্তিজীবনে দুঃখ থাকলেও হাসির মিউজিক করতে হচ্ছে। এই জায়গাটা আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং লাগে।

পিন্টু ঘোষ এই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছেন। কিন্তু ব্যান্ড চিরকুটকেও মিস করেন। তাঁর ভাষ্য এমন, ‘শিল্পীদের আসলে স্বাধীন থাকাটা জরুরি। আমি বলব, ব্যান্ডকে আসলে মিস করি। ব্যান্ডে আমার ১০-১১ বছরের কন্ট্রিবিউশন। কোনো একটা মুহূর্ত... এত বছর আমরা একসঙ্গে গ্রুমিং করেছি, ফ্যামিলির মতো ছিল। ওই জায়গাটা আমি মিস করি।’

ব্যান্ড ছাড়ার পরের গল্পটা এমন, ‘একসঙ্গে থাকলে এক ধরনের সাউন্ড হয়, আর যখন আমি আমার মতো স্বাধীনভাবে কাজ করছি, এখানে আমি আবার একটা স্কুল পাচ্ছি আমার জীবনের। আমি প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ পাচ্ছি। ব্যান্ডে ওই রকম চ্যালেঞ্জ আসলে থাকে না। একটা ফরমেট হয়ে গেল, এই ৮-১০টা গান আমাকে চার-পাঁচ বছর করতে হচ্ছে। আমি এটাকে খারাপ বলব না। একজন মানুষ যদি একটি গান ৫০ বছর শুনতে চায়, আমার কিছু করার নেই। আমি তো একজন শিল্পী। আমি কি একইরকম গল্প বলব, তাহলে তো সৃষ্টির জায়গাটা ওপেন হলো না। তো, এই জায়গাটা থেকে, স্বাধীনতার জায়গাটা থেকে মিউজিক করার জায়গা থেকে অনেক কমফোর্ট জোনে আছি।’

আড্ডায় এনটিভি অনলাইন জানতে চেয়েছিল, সংগীতে আপনারা একটা দীর্ঘ সময়ের পর সফলতা পেয়েছেন। কিন্তু এখন তো অনেকে গান কভার করেই জনপ্রিয়। ব্যাপারটা কীভাবে দেখছেন। পিন্টুর উত্তর, ‘তাড়াহুড়ো করে আসলে কোনো শিল্প হয় না। এটার জন্য সাধনা করতে হয়। আমরা যখন অল্পতে পেয়ে যাই, তখন আমরা আর সাধনা করতে চাই না। একটা গান হয়তো ভালো লাগতে পারে, কিন্তু...।’

কিন্তু এখন তো ভিউ দেখেই শিল্পীকে জনপ্রিয় বলা হচ্ছে, পিন্টু ঘোষ ব্যাপারটা এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আমাদের দেশে যে মানুষগুলো ভিউ করছে, ওই মানুষগুলোর আসলে ক্লাসটা কী? উনারা কি আসলে জাজ করতে পারছেন? সবাই তো আসলে জাজ করার ক্ষমতা রাখে না। একটা জিনিস হয় কি, রংচঙে জিনিস দেখলে সবার চোখ পড়ে, কিন্তু এর মানে এই না একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওই রংচঙের সামনে দাঁড়িয়ে যাবেন না...।’

আড্ডা শেষে পিন্টু ঘোষ জানিয়েছেন নিজের পরিকল্পনার কথা। সেটা এমন, ‘সিনেমা এবং সিনেমার মিউজিক নিয়ে কাজ করছি। আমি যখন ঢাকায় এসেছিলাম, তখন আমার চিন্তা ছিল, আমি তথাকথিত বাংলা সিনেমার জন্য মিউজিক করব। বাংলা সিনেমার মধ্যে অনেক আপনত্ব আছে, এখানে আমার পাশের বাসার বা আমার নিজের জীবনের গল্প থাকে। আর এই গল্পে মিউজিক যখন দেব, তখন কেমন লাগে, এটা আমার ছোটবেলা থেকে ছিল। আমি যেভাবে কাজ করছি, আগামী পাঁচ বছর সেভাবে কাজ করতে চাই, নতুন সাউন্ড সৃষ্টি করতে চাই। তখন হয়তো একটা কিছু দাঁড়াবে।’