ভালো নেই চলচ্চিত্রের দিনমজুররা
কাজ কমে যাওয়ায় অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন চলচ্চিত্রকর্মীরা। এরই মধ্যে পেশা বদল করেছেন প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মী। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরাও ঠিকমতো টাকা পাচ্ছেন না। এখন করোনা মহামারি যুক্ত হওয়ায় আরো কষ্টে কাটছে দিন। ভালো নেই চলচ্চিত্রের দিনমজুররা।
একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যুক্ত থাকে ১৮টি পেশার মানুষ। এদের নব্বই শতাংশই দৈনিক মজুরিতে কাজ করে থাকেন। একসময় চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। তবে বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা বেহাল, যে কারণে পেশা বদল হয়েছে অনেকেরই। তবু চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।
ছবির নায়ক-নায়িকা, খলনায়করা সাধারণত একটি চলচ্চিত্রে পারিশ্রমিক নেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। প্রথম সারির খল অভিনেতা একই রকম টাকা পেয়ে থাকেন। মা-বাবা চরিত্রে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা দৈনিক ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। বাকিরা পান দৈনিক দু-এক হাজার টাকা। নায়ক-নায়িকা, প্রধান খল অভিনেতা ছাড়া বাকিরা দিনমজুর। তবে তাঁরা নাকি সঠিক পারিশ্রমিক পান না, এমন অভিযোগ অনেকের।
কৌতুক অভিনেতা চিকন আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করাটা নেশা। যে কারণে চলচ্চিত্রের এই বেহাল অবস্থায়ও এখানে পড়ে আছি। দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছি, তবে পারিশ্রমিক পাইনি বললেই চলে। পেয়েছি পরিচিতি। আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেল আছে, এ ছাড়া বেশ কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাই চলতে পারছি। আমার আশপাশে যারা আছে, তাদের অবস্থা অনেক করুণ।’
সহকারী পরিচালক গাজী খালেক বলেন, ‘একসময় একটি ছবিতে কাজ করে পেতাম ৮০ হাজার টাকা। এখন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়, কাজ শেষ হলে প্রযোজক আর ফোন ধরেন না। পরে আর কাজ পাব না বলে ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতেও পারি না।’
ক্যামেরাম্যান পনির বলেন, ‘ঢাকা শহরে ছোট একটা বাড়ি আছে, তাই চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারছি। আমাদের ক্যামেরা-শ্রমিকদের অবস্থা অনেক খারাপ। এখন যারা কাজ করছি, তাদের কাছে অনেকটাই শখের পেশা। কাজ করিয়ে অনেকেই টাকা পর্যন্ত দিতে চায় না।’
কোরিওগ্রাফার হাবিব রহমান বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। শরীরের ঘাম ঝরিয়ে কাজ করি। মেধা ও শারীরিক পরিশ্রম দুটোই করতে হয়। এর পরও কাজের মূল্যায়ন করতে চায় না অনেকেই। পাই না সঠিক পারিশ্রমিক। অথচ বিদেশি কোরিওগ্রাফার দিয়ে কাজ করার সময় তাদের স্যার বলে সম্বোধন করছে, প্লেন ফেয়ার দিয়ে নিয়ে আসছে, ফাইভ স্টার হোটেলে রেখে কাজ করাচ্ছে। শতাধিক সহশিল্পী দিয়ে কোরিওগ্রাফি করার সুযোগ দিচ্ছে। তবে দুঃখ করি না, কারণ আমাদের কাজ দেশের দর্শক ঠিকই প্রশংসা করছে।’
একইভাবে চলচ্চিত্রের অন্য পেশার মানুষগুলোও ভালো নেই। হাজারও সমস্যার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে তাঁদের জীবন। ক্যামেরার পেছনে কাজ করে বলে সাধারণ মানুষও তাঁদের চেনেন না। তবে সুদিন ফিরবে, আবারও ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তাঁরা।