মোস্তফা কামাল সৈয়দ স্মরণে ‘অনুপ্রেরণায় প্রিয়জন’
জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। এবার তাঁর স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সংগঠনটি। ‘অনুপ্রেরণায় প্রিয়জন মোস্তফা কামাল সৈয়দ’ শিরোনামের অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে বুধবার।
আগামীকাল বুধবার (৩ জুন) রাত ৯টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা যাবে সংগঠনের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করবেন ডা. আব্দুর নুর তুষার। স্মৃতিচারণা করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, আবুল হায়াত, আফজাল হোসেন; সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল ও সামিনা চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মোস্তফা কামাল সৈয়দ আমাদের মিডিয়াতে অনেকেরই বন্ধু, অনেকের অনুপ্রেরণা, আবার আমাদের অনেকের শিক্ষক তিনি। অনেকটা নীরবেই তিনি কাজ করে গেছেন। যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করেননি, তাঁদের অনেকেরই মোস্তফা কামাল সৈয়দ সম্পর্কে অনেক অজানা রয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা এমন বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
অলিক আরো বলেন, ‘আগামীকাল যাঁরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা অগ্রজ, অনেকেরই বন্ধু। তবে মোস্তফা কামাল সৈয়দ একেক জেনারেশনের কাছে একেক রকম। যে কারণে পরে আমরা একেবারেই নবীন নির্মাতা ও মাঝারি বয়সের যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে আরো দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করব।’
আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগে মিলিত হন মোস্তফা কামাল সৈয়দের সহকর্মীরা। তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে হয় দোয়া মাহফিল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনের অষ্টম তলায় এনটিভি কার্যালয়ের অনুষ্ঠান বিভাগে দোয়া মাহফিল হয়। এনটিভির সব বিভাগের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মোস্তফা কামাল সৈয়দের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য দোয়া কামনা করেন।
গণমাধ্যম, বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষকে কাঁদিয়ে গত রোববার (৩১ মে) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান, বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর মোস্তফা কামাল সৈয়দ চলে যান না-ফেরার দেশে। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
গত ১১ মে মোস্তফা কামাল সৈয়দ অসুস্থ হলে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ৩১ মে দুপুরে মারা যান তিনি।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি ছিল তাঁর। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা।
১৯৪৩ সালে মোস্তফা কামাল সৈয়দ ঢাকার তেজকুনিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ জিল্লুর রহমান এবং মা আমাতুল উমদা বেগম। বাবা তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্নের পর প্রযোজক হিসেবে পাকিস্তান টেলিভিশন করপোরেশনে যোগ দেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। সুদীর্ঘ টেলিভিশন-যাত্রায় বিভিন্ন সময় সৃষ্টি করেন অনেক কালোত্তীর্ণ অনুষ্ঠান, নাটক। অর্জন করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পুরস্কার।
পর্দার পেছনের মানুষ হলেও মিডিয়া জগতে সজ্জন ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ বাংলাদেশের দর্শকের কাছে খুব চেনা। আশি দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সংগীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সূচনাপর্বে নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসত। অনেক সময় নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময়ের বেশির ভাগ নাটকের ভূমিকায় কিংবা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে তাঁর প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদ লেখা ‘প্রজাপতি মন’, আশি দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কূল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের ৫২ বছরের কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন টিভি চ্যানেলে। ২০০৩ সালে এনটিভির শুরু থেকে তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর কর্মদক্ষতা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এনটিভি দর্শকের কাছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রুচিশীল চ্যানেলের উদাহরণ হয়েছে।
সৈয়দের মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোক নামে এনটিভি পরিবারে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। কর্মচঞ্চল এ মানুষটির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ।