শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর জন্মদিন আজ
চক্ষের নজর এমনি কইরা, একবার যদি কেউ ভালোবাসত, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে কাঁদিস কেন মন—এমন হাজারো গান দিয়ে শ্রোতার হৃদয় জয় করেছেন বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সৈয়দ আব্দুল হাদী। ১৯৪০ সালের আজকের এই দিনে (১ জুলাই) তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
সৈয়দ আবদুল হাদী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এরই মধ্যে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। চলচ্চিত্রের গানে বেশ সফলতা তিনি। তবে রবীন্দ্রসংগীতেও রয়েছে তাঁর অসামান্য দখল। তাঁর কণ্ঠে রবিঠাকুরের গানও হয়েছে শ্রোতানন্দিত।
আব্দুল হাদীর শৈশব কেটেছে আগরতলা, সিলেট ও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। ছোটবেলায় বাবার গ্রামোফোন রেকর্ড শুনে সংগীতের প্রতি আগ্রহী হন তিনি। স্কুল-কলেজ শেষ করে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকেই মূলত তিনি একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
সৈয়দ আব্দুল হাদী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। লন্ডনের ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান হিসেবেও কাজ করেছেন।
সংগীতজীবনে সৈয়দ আবদুল হাদী দেশাত্ববোধক গানের জন্য জনপ্রিয়। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় তিনি সংগীত সাধনায় মগ্ন। ১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে সৈয়দ আবদুল হাদী একক কণ্ঠে প্রথম বাংলা সিনেমায় গান করেন। সিনেমার নাম ছিল ‘ডাকবাবু’। মো. মনিরুজ্জামানের রচনায় সংগীত পরিচালক আলী হোসেনের সুরে একটি গানের মাধ্যমে সৈয়দ আবদুল হাদীর চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু।
বেতারে গাওয়া হাদীর প্রথম জনপ্রিয় গানটি ছিল ‘কিছু বলো, এই নির্জন প্রহরের কণাগুলো হৃদয়মাধুরী দিয়ে ভরে তোলো’। সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রের গানে সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন লাকী আকন্দ। এই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গান ‘সখি চল না, সখি চল না জলসাঘরে এবার যাই’ গেয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশ হয় সৈয়দ আবদুল হাদীর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের একক অ্যালবাম ‘যখন ভাঙল মিলন মেলা’। সৈয়দ আবদুল হাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে অনার্স পড়ার সময় সুবল দাস, পি সি গোমেজ, আবদুল আহাদ, আবদুল লতিফ প্রমুখ তাঁকে গান শেখার ক্ষেত্রে সহায়তা ও উৎসাহ জুগিয়েছেন।
হাদীর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে—যেও না সাথী, চক্ষের নজর এমনি কইরা, একবার যদি কেউ ভালোবাসত, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে কাঁদিস কেন মন, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, আর কত দিন বল সইব, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, এমনও তো প্রেম হয়, সতী মায়ের সতী কন্যা, চোখ বুঝিলে দুনিয়া আন্ধার, যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে, চোখ বুঝিলে দুনিয়া আন্ধার প্রভৃতি।