শুভ জন্মদিন তৌকীর আহমেদ

Looks like you've blocked notifications!
জনপ্রিয় অভিনেতা, নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত

নন্দিত অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। আশির দশকের শেষের দিকে তাঁর অভিনয়জীবন শুরু হয়। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করেছে অগণিত দর্শককে। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি নির্মাতা হিসেবেও মুনশিয়ানা দেখাচ্ছেন। ১৯৬৫ সালের আজকের এই দিনে (৫ মার্চ) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তৌকীর।

তৌকীর আহমেদ ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি স্থাপত্যে স্নাতক করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে। ১৯৯৯ সালে ভালোবেসে নন্দিত মডেল, অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াতকে বিয়ে করেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন আলোকিত করে রেখেছে এক কন্যাসন্তান।

আশির দশকের মাঝামাঝিতে বিটিভিতে প্রচারিত নাটকগুলোর রোমান্টিক চরিত্রের শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন তৌকীর। ১৯৯৬ সালে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘নদীর নাম মধুমতী’-তে অভিনয় করেন তিনি। একই বছর তিনি তাঁর শ্বশুর আবুল হায়াত পরিচালিত প্রথম নাটক ‘হারজিত’-এ অভিনয় করেন। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন স্ত্রী বিপাশা হায়াত।

পরবর্তী সময়ে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত দেশভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’ ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস ‘লালসালু’ অবলম্বনে নির্মিত ‘লালসালু’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

তৌকীর আহমেদ পরিচালিত প্রথম নাটক ‘তোমার বসন্ত দিনে’। ২০০৪ সালে তিনি নাটক ‘অরণ্যের সুখ দুঃখ’ পরিচালনা করেন। একই বছর তাঁর চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ পরিচালনার মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি আমজাদ হোসেন রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এটি পরিচালনার মাধ্যমে তিনি ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ প্রদর্শিত হয় ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।

২০০৬ সালে মুক্তি পায় তৌকীর রচিত ও পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘রূপকথার গল্প’। ওই চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে তিনি ২০০৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সাতটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। তাঁর শ্বশুর আবুল হায়াত একই ছায়াছবির জন্য সেরা সহ-অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রটি বালি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

২০১৩ সালে নিজের রচনায় ও পরিচালনায় তৌকীর নির্মাণ করেন টেলিফিল্ম ‘সোনালী রৌদ্রের রং দেখিয়াছি’। এরপর তিনি পলাশ মাহবুবের রচনায় নির্মাণ করেন টেলিফিল্ম ‘বাল্যশিক্ষা’। এতে অভিনয় করেন কলকাতায় বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী রোজা পারমিতা।

দীর্ঘ আট বছর বিরতির পর শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিম ও নিপুণকে নিয়ে তৌকীর তাঁর চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’র কাজ শুরু করেন। চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালে একুশে বইমেলায় নিজের প্রকাশিত হওয়া ‘অজ্ঞাতনামা’ বইয়েরই চলচ্চিত্রায়ণ। চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও বে অব ন্যাপলস ইনডিপেনডেন্ট চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৬ সালে ঈদুল আজহার জন্য তৌকীর নির্মাণ করেন বিপাশা হায়াতের রচনায় ‘আহরণ’ ও তাঁর রচনায় ‘ইন্দ্রজাল’। এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী নিয়ে তৌকীর নির্মাণ করেন তাঁর পঞ্চম চলচ্চিত্র ‘হালদা’। চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ১৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তৌকীর আহমেদ শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন।