সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন আজ

Looks like you've blocked notifications!

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক, বহুমাত্রিক প্রতিভাধর সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ এ কিংবদন্তির শততম জন্মদিন।

কলকাতায় জন্ম হলেও তাঁর আদি পৈতৃক ভিটা ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া গ্রামে। পৈতৃক বাড়িটি এখনো রয়েছে সেখানে। ওখানেই তাঁর পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও বাবা সুকুমার রায়ের জন্ম।

সত্যজিৎ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (ইতালীয়: Ladri di biciclette, বাইসাইকেল চোর) দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।

সত্যজিৎ ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল (Best Human Documentary) পুরস্কার। ‘পথের পাঁচালী, ‘অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯), এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্রত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বহুল স্বীকৃত।

চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সংগীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনি লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক।

বর্ণময় কর্মজীবনে সত্যজিৎ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত হলো ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। তিনি এ ছাড়া ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একটি গোল্ডেন লায়ন, দুটি রৌপ্য ভল্লুক লাভ করেন।

সত্যজিৎ বেশ কয়েকটি ছোট গল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন, যা প্রাথমিকভাবে শিশু-কিশোরদের পাঠ্য হিসেবে বিবেচনা করে। কল্পবিজ্ঞানে তাঁর নির্মিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কু।

সত্যজিৎ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন সম্মাননা প্রদান করে। সত্যজিৎ পদ্মভূষণসহ মর্যাদাপূর্ণ সব ভারতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন।

২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় সত্যজিৎ ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন। হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ মৃত্যুবরণ করেন।