কান

স্বর্ণপত্র ‘দ্য স্কয়ারে’র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক সোফিয়া

Looks like you've blocked notifications!

বলতে গেলে, বৃত্তের বাইরে গিয়েই পুরস্কার ঘোষণা করে পর্দা নেমেছে ৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের। পেদ্রো আলমোদোভারের নেতৃত্বে থাকা বিচারকমণ্ডলী গতকাল রোববার একের পর এক যেন বিস্ময় উপহার দিচ্ছিলেন পুরস্কার ঘোষণায়। তেমনই এক বিস্ময়ের নাম ‘দ্য স্কয়ার’; সুইডেনের রুবেন ওস্টলান্ড পরিচালিত বিতর্কিত এই ছবিটিই ১৮টি চলচ্চিত্রকে পেছনে ফেলে ৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নিয়েছে স্বর্ণপত্র বা ‘পাম দ্য’র’। উৎসবের অফিশিয়াল সাইটসহ বিবিসি, এএফপির মতো বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি এসেছে, তবে ভ্যারাইটিতে এসেছে বিস্ময়সূচক চিহ্ন নিয়েই। এর কারণ, এবারের উৎসবে ছবিটি দেখে দর্শক একেবারে দুই মেরুতে অবস্থান নেন, আর এ ধরনের বিতর্কিত ব্যঙ্গাত্মক ছবিও সাধারণত স্বর্ণপত্র পায় না।

স্পেনের পরিচালক ও ৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান বিচারক পেদ্রো আলমোদোভার অবশ্য নিজেই বলেছেন ‘বিস্ময়’ উপহার দিতে যাচ্ছেন তিনি। ‘দ্য স্কয়ার’ সম্পর্কে পেদ্রো বলেন, ছবিটি বেশ সমৃদ্ধ এবং ‘পুরোপুরি সমসাময়িক’, তা ছাড়া কাহিনীটি ‘রাজনৈতিকভাবে সংশোধিত হওয়া’ ও ‘একানায়কতন্ত্র’ নিয়ে নির্মিত।

পুরস্কার গ্রহণের পর ওস্টলান্ড ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান, সেই সঙ্গে তাঁর আড়াই ঘন্টার ছবি নিয়ে যারা সমালোচনা করেছিলেন, তাঁদের জবাবও দেন। তিনি বলেন, তাঁর ২ ঘন্টা ২০ মিনিটের ছবিটি অন্তত হ্যারি পটার সিক্যুয়ারের চেয়ে ছোট। ছবির প্রযোজকের উদ্দেশ্যে ‘দ্য স্কয়ারে’র পরিচালক বলেন, ‘রোববার আড়াই ঘন্টার ছবিটি প্রদর্শনের পর আপনিই বোধহয় একমাত্র প্রযোজক এটা বলতে পেরেছেন- ছবিটিকে আমাদের আরো বড় করতে হতো।’

‘দ্য স্কয়ার’ দিয়েই কিন্তু বিস্ময়ের শেষ নয়, চিত্রনাট্যের জন্য জোড়া পুরস্কার ও অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যানকে বিশেষ সম্মাননাও অনেকের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। অবশ্য নিকোল কিডম্যানকে এবারের আসরের মধ্যমণি বললে ভুল বলা হবে না, কারণ তাঁর অভিনীত চারটি ছবি নির্বাচিত হয়ে এবারের উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। তাই চার-চারটি দিনই কিডম্যানকে হাঁটতে হয়েছে কানের লালগালিচায়। স্বভাবতই গণমাধ্যম ও আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। কিডম্যানের ‘দ্য কিলিং অব আ স্যাক্রেড ডিয়ার’ ও ‘দ্য বিগাইল্ড’ ছবি দুটি ছিল প্রতিযোগিতার তালিকায়। আর অন্য দুটি ছবি ‘টপ অব দ্য লেক’ ও ‘হাউ টু টক টু গার্লস অ্যাট পার্টিজ’ ছিল বিশেষ প্রদর্শনীর আওতায়।

বড় পুরস্কার বা গ্রাঁ প্রি পেয়েছে রবিন ক্যামপাইলো পরিচালিত ‘১২০ বিটস পার মিনিট’। ছবিটি ফ্রান্সে সমকামী অধিকার ও এইডসবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হয়েছে। পরিচালক হিসেবে এবারই প্রথম কানে প্রতিযোগিতা করেছেন ক্যামপাইলো, যদিও এর আগে লখোঁ কাঁততের ‘দ্য ক্লাশ’ ছবির সহকারী চিত্রনাট্যকার হিসেবে প্রতিযোগিতা করেছিলেন। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের তকমা অর্জন করেছেন সোফিয়া কপোলা, ‘দ্য বিগাইল্ড’ ছবির জন্য। থমাস কুলিনানের নারীকেন্দ্রিক উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। পুরস্কার গ্রহণের পর বিখ্যাত পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার মেয়ে সোফিয়া বলেন, ‘এই সম্মানের জন্য বিচারকদের ধন্যবাদ। আমার বাবাকে ধন্যবাদ, তিনিই আমাকে লিখতে ও পরিচালনা করতে শিখিয়েছেন, সিনেমার ভালোবাসা আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ, আর শিল্পী হয়ে উঠতে আমাকে অনুপ্রাণীত করার জন্য মাকেও ধন্যবাদ জানাই।’ 

কানের ইতিহাসে সোফিয়া কপোলা দ্বিতীয় নারী, যার হাতে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার উঠলো। এর আগে ১৯৬১ সালে ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ফ্ল্যামিং ইয়ার্সে’র জন্য প্রথম নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছিলেন ইউলিয়া সোলসেভা। সোফিয়ার পুরস্কার পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকরা মন্তব্য করেন চলচ্চিত্র নির্মাণে আরো নারীদের যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাঁরা চলচ্চিত্রে নারীর উপস্থাপন নিয়েও সমালোচনা করেন। মার্কিন অভিনেত্রী ও বিচারক জেসিকা চেসটেইন মনে করেন এবারের উৎসবে প্রদর্শিত ছবিগুলোতে নারীর উপস্থাপন কিছুটা ‘অস্বস্তিকর’ ছিল। তিনি বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় আমি বুঝেছি, দুনিয়া আসলে নারীকে কীভাবে দেখে। কিছু ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব চলচ্চিত্রে নারীকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।’  ছবি নির্মাণে আরো নারী যুক্ত হলেই চিরাচরিত জীবনের পরিচিত নারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন ‘দ্য হেল্প’ খ্যাত জেসিকা চেসটেইন। উৎসবের আরেক নারী বিচারক, ‘টনি এর্ডমান’ ছবির পরিচালক ম্যারেন এডিও মনে করেন, আরো বেশি নারী নির্মাতার প্রয়োজন। নারীরা না এলে অনেক গল্পই না বলা থেকে যাচ্ছে বলে যোগ করেন এডি।

এবারের উৎসবে বিচারকদের পুরস্কার বা জুরি প্রাইস পেয়েছেন পরিচালক আন্দ্রেই ভিয়াগিনস্তেভ, ‘লাভলেস’ ছবির জন্য। কানের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭০তম বার্ষিকী পুরস্কার পেয়েছেন নিকোল কিডম্যান। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে সোফিয়া কপোলার পুরস্কার জেতার কথা তো আগেই বলেছি। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েছেন জার্মান অভিনেত্রী দিয়ান ক্রুগার, ‘ইন দ্য ফেইড’ ছবির জন্য।

শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার ভাগ হয়েছে দুটি ছবিতে, পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন। ‘কিলিং অব আ স্যাক্রেড ডিয়ার’ ছবির জন্য পেয়েছেন ইয়োরগস ল্যানথিমোস ও এফথিমিস ফিলিপু। আর ‘ইউ ওয়্যার নেভার রিয়েলি হিয়ার’ ছবির জন্য পেয়েছেন লিন র‍্যামজে।

শ্রেষ্ঠ নবাগত ছবির জন্য ‘ক্যামেরা দ্য’র’ পুরস্কার পেয়েছেন লিওনর সেরেইল (জ্যুন ফাম)। কিউ ইয়াং পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আ জেন্টল নাইট’ পেয়েছে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সম্মান।

১০ দিনব্যাপী কান চলচ্চিত্র উৎসবটি শুরু হয় গত ১৭ মে, যা শেষ হয় গতকাল ২৮ মে। এবারের উৎসবের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে মাস্টার অব সেরেমনিজ হিসেবে যুক্ত ছিলেন ইতালির অভিনেত্রী মনিকা বেলুচি। উৎসবের শুরুর দিন প্রদর্শিত হয় ফরাসি পরিচালক আর্নাউদ ডেসপ্লেচিনের ‘ইসমাইল’স গোস্ট’ ছবিটি।

‘দ্য স্কয়ার’ ছবির একটি দৃশ্য