হুমায়ুন ফরিদী : আছেন অধিক না থাকা জুড়ে

২০১২ সালের পর থেকে এ দেশের মিডিয়া জগতে একটি স্থায়ী আফসোস তৈরি হয়েছে। এই আফসোসের দীর্ঘশ্বাস শোনা যায় প্রায়ই। পরিচালক- হোক সেটা সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্ম অথবা মঞ্চের- সবারই এক আফসোস- এমন শক্তিমান অভিনেতা ছাড়া মনের মতো চরিত্র ফুটিয়ে তোলা মুশকিল। সেই মনের মতো চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার মানুষটি আর নেই! সবার দীর্ঘশ্বাস-‘এ দেশে এ ক্যারেক্টার কেবল ফরিদী ভাই-ই পারতেন। কিন্তু ফরিদী ভাই তো...”
ফরিদী ভাই নেই, তাই চরিত্রটাও চিত্রায়নের সুযোগ নেই। দীর্ঘশ্বাস বাড়ে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। মিডিয়াপাড়া থেকে টেলিভিশন স্ক্রিন, সিনেমার পর্দা, মঞ্চের আলো-আঁধারি- সব জায়গায় তীব্র হয়ে বাজে তাঁর অনুপস্থিতি। শ্রদ্ধাঞ্জলি বা আবেগ নয়, এটা স্পষ্ট অভাব। অপূরণীয় অভাব। এই অভাব পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই বলতে হয়। ফাল্গুনের প্রথম দিনে চলে যান তিনি। ওল্ড টাউনের জাদুবাস্তবতার গলি, জাহাঙ্গীরনগরের মুক্তমঞ্চের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল এরিনা, থিয়েটারের দিনরাত এককরা মহড়া-প্র্যাকটিস-সংলাপ, এফডিসির রংমহল- সবই কেমন ফাঁকা ফাঁকা- শূন্য। ফরিদী ভাইয়ের অনুপস্থিতি তীব্র হয়ে দেখা দেয়। প্রথম ফাগুনের আগুন রঙা দিনে চড়া এক বিষাদের সুর। ২০১২ সাল, ১৩ ফেব্রুয়ারি। হুমায়ুন ফরিদীর প্রস্থান।
তাঁর কোনো বিশেষ কাজ বা বিশেষ অবদান উল্লেখ করতে যাওয়া নিতান্তই হাস্যকর। ‘মানুষ তাঁকে অমুক নাটকে, অমুক ছবিতে তমুক চরিত্রের জন্য মনে রাখবে’- এসব বলারও কোনো মানে নেই। যা কিছু করেছেন, যখন যেভাবে করেছেন- সবই শ্রেষ্ঠ। ওয়ান অ্যান্ড ওনলি হুমায়ুন ফরিদী শো। এ দেশের অভিনয় জগতে তাঁকে শ্রেষ্ঠতম চরিত্রাভিনেতা কিংবা মেথড অ্যাক্টর- যেটাই বলুন না কেন, একবাক্যে মেনে নেবেন সবাই। বিচিত্র, বেখেয়ালি, বেসামাল আর বেপরোয়া ব্যক্তিজীবনের মতোই বিস্তৃত তাঁর অভিনয়জীবন। নায়ক, খলনায়ক, মহানায়ক- সব সময়ই চরিত্রকে ছাপিয়ে গেছেন আবার চরিত্রেই বিলীন হয়েছেন- এ কারণেই তিনি হুমায়ুন ফরিদী। এটা হয় তো একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। আর মানুষ ফরিদী রাখঢাক করে কথা বলতেন না, সোজাসাপ্টা আর চাঁছাছোলা শব্দ তাঁর প্রতিনিয়ত ভাষ্য। আর এর সঙ্গে অসামান্য সেন্স অব হিউমার! তাঁর প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে কিবোর্ডে উঠে আসা এ শব্দগুলো দেখলেও নির্ঘাৎ মশকরা করতেন, আর ভুবন কাঁপানো হাসিতে আন্দোলিত করে তুলতেন চারপাশ!
হুমায়ুন ফরিদীর হাসি কানে বাজছে। খোলা গলার, উদাত্ত হাসি।