ঈদ আনন্দ

তারকাদের সালামি, শপিং ও অন্যান্য

Looks like you've blocked notifications!

পপি

ঈদের দিন বাসায় থেকে  বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করব। অনেকেই ঈদের দিন বাসায় আসবে, তাদের সঙ্গে আড্ডায় কাটবে সকাল-দুপুর। বিকেলে আমি কয়েকটি বাসায় যাব, কিছু আত্মীয় ও বন্ধুদের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

ছোটবেলার ঈদটার কথা খুব মনে পড়ে। খুলনায় গ্রামের বাড়িতে আমাদের যৌথপরিবারের কাজিনদের নিয়ে ঈদ করার আনন্দ অনেক। সবচাইতে ভালো লাগত আমি যখন জামা কিনে আনতাম আমার কাজিনরা চলে আসত আমার জামা দেখতে। সবাই তার নিজের জামা-কাপড় লুকিয়ে রেখে আমার জামা দেখতে আসত। আমি সবার বড় যে কারণে আমি জামা লুকিয়ে রাখতাম না। বরং সবাই আমার জামা দেখে অনেক প্রশংসা করেছে, সেটাই বেশি উপভোগ করতাম। সালামির জন্য সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতাম। দাদি সব সময় ৫টাকার নতুন নোট দিতেন, আর চাচা-চাচির কাছ থেকেও সালামি পেতাম। আবার কাজিনদের টাকা এক করে ঈদের কয়েকদিন পিকনিক করতাম।

এক ঈদে আমি অনেক পছন্দ করে একটি সাদা ড্রেস কিনেছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেটাতে ময়লা লেগে নষ্ট হয়ে যায় । আমি খুব মন খারাপ করেছিলাম। এখনো সেটা মনে হলে হাসি পায়।

লাক্স চ্যানেলআই ফটো সুন্দরী হওয়ার সময় ২৫ হাজার টাকার একটা চেক পেয়েছিলাম। দাদিকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, মা-বাবাকে ১০ হাজার, আর বাকি ১০ হাজার টাকা সবাইকে নিয়ে পিকনিক করেছিলাম। এটা আমার স্মরণীয় গিফট দেওয়ার ঘটনা। এরপর যখন সিনেমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম তারপর অনেককেই অনেক কিছু দিয়েছি কিন্তু এত আনন্দ পাইনি। 

পরীমনি

ছোটবেলায় নানা ভাই আমাকে সালামি না দিয়ে কাউকেই দিতেন না। ঈদের দিন ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে আমার কোনো চিন্তা ছিল না। কারণ আমার কাজিনরা আমাকে ডেকে তুলত। আমি জানতাম নানা ভাই আমার জন্য টাকা রেডি করে বসে আছেন। তাঁর কাছে টাকা সংগ্রহ করে অন্য আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা তুলতে যেতাম। আসলে ছোটবেলার ঈদই মজার হয়। এখন মজার চেয়ে দ্বায়িত্বটাই বেশি।

জীবনের প্রথম নিজের টাকায় শপিং করি ২০১৩ সালে। মার্কেটে গিয়ে কি কিনব বুঝতে পারছিলাম না। প্রথমেই নানির জন্য সাতটি শাড়ি কিনে ফেলি। কোনটা পছন্দ হয় না হয় একটা ভয় ছিল মনের মধ্যে। নানার জন্য কিনেছিলাম চারটি পাঞ্জাবি। এভাবে বাসার সবার জন্যই কয়েকটি করে ড্রেস কিনে নিয়ে যাই। সব চাইতে খুশি লেগেছে  যখন দেখি প্রত্যেকটি ড্রেসই সবাই পছন্দ করেছে। আসলে এরপর আরো ঈদ গেছে, এখনো যাচ্ছে, সবার জন্য গিফটও কিনেছি কিন্তু  প্রথম গিফট দিতে পারার যে আনন্দ সেটা বলে বুঝানো যাবে না। খুব খারপ লাগছে এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারছি না। কাজের এত চাপ যে বাড়িতে গেলে কাজের ক্ষতি হবে। এই ঈদে নানাভাইকে খুব মিস করব।  

ববি

আজ ঈদের দিন দুপুর পর্যন্ত বাসায় থাকতে হচ্ছে। অনেকেই বাসায় আসছে তাদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি ভালো লাগে। বিকেলে বাইরে বেরুব, অনেকের বাসায় যেতে হবে। এখন বড় হয়েছি। যে কারণে অনেক ধরনের দায়িত্ব বেড়েছে। ছোটবেলার ঈদটা খুব মিস করি।

ছোটবেলায় সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল জামা ঈদের দিন পর্যন্ত নতুন রাখা। কাপড় কেনার পর থেকে কীভাবে লুকিয়ে রাখা যায় সেই প্রতিযোগিতা চলত কাজিনদের সাথে। এক ঈদে আমার ড্রেস আমার কাজিনরা দেখে ফেলেছিল, যে কারণে অনেক কান্নাকাটি করি। পরে আরেকটি নতুন ড্রেস পেয়েছিলাম। আগে ভাবতাম কেউ ড্রেস দেখে ফেললে ঈদ নাকি বাতিল হয়ে যায়। তবে আমার কোনো ঈদ বাতিল হয়নি কারণ কেউ কোনো ঈদেই আমার ড্রেস দেখতে পারেনি। আর কেউ দেখে ফেললে বাবাকে আবার নতুন ড্রেস কিনে দিতে হতো।

ক্লাস এইটে আমি স্কলারশিপে কিছু টাকা পেয়েছিলাম আর সেই টাকা দিয়ে প্রথম বাবা-মার জন্য কাপড় কিনি। সেই আনন্দটা জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারব না। এরপর মডেলিং করে, অভিনয় করে অনেকবার অনেক গিফট করেছি। কিন্তু স্কুলের সেই টাকার গিফট আজও মনে পড়ে।  

বিপাশা কবির

ঢাকাতেই মা বাবা নানু বাড়ির সবার সাথে ঈদ করছি। এবার টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খুব ব্যস্ত থাকব। এ কারণে ঢাকার বাইরে যাওয়ার চিন্তা একেবারেই নেই। শুটিং ডাবিংয়ের কারণে শপিং করেছি গতরাতে। সকাল বেলাটা বাসায় বন্ধুদের সঙ্গেই কাটিয়েছি।

ছোটবেলায় সালামি আর নতুন জামা লুকানোতেই বেশি ব্যস্ত সময় কাটত। জামা লুকিয়ে রাখতাম আর আর প্রতিদিন একবার করে দেখতাম। তবে নিজে দেখার আগে দরজা, জানালা শক্ত করে বন্ধ করে তারপর দেখতাম। ঈদের দিন জামায় কোনো দাগও লাগত না।

আমি যখন কলেজে পড়ি তখন টিউশনি করতাম। সেই টাকা দিয়ে আমার নানা-নানি, মা-বাবাকে প্রথম ঈদের গিফট দেই, এটা অনেক আনন্দের বিষয় ছিল। আমি নানা-নানির কাছেই বড় হয়েছি, যে কারণে তাঁদের গিফট করতে পেরে নিজের কাছে খুব ভালো লেগেছে। এখনো গিফট করি, নিজের জন্য কিনি, সবই এখন দায়িত্ব মনে হয়। 

আরিফিন শুভ

সকালে নামাজ পরে দিনটা শুরু করেছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, আত্মীয়দের আপ্যায়ন, ভক্তদের সাথে চেটিংয়ে পার হচ্ছে ঈদের দিনটা। এখন আসলে মজার চেয়ে দ্বায়িত্বটাই বেশি। ঈদটা আসলে একেক বয়সে একেক রকম। ছোটবেলায় তো একবার চাচার জামা পরে ঈদ করেছিলাম।

ছোটবেলা থেকেই আমি খুব ছবি দেখতাম। ঈদের আগের রাতে ছবি দেখব না এটা কি করে সম্ভব? যখন আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন ভিসিআরে ছবি দেখে সবাই। যেহেতু ভিসিআরের দামটা একটু বেশি তাই সবার বাসায় সেটা ছিল না। আমি আমার চাচার বাসায় গেলাম রাতে ছবি দেখে আবার বাসায় ফিরে আসব। ছবি দেখতে দেখতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে মনে হলো আরে আজ না ঈদ? এখন জামা কোথায় পাব? এমন সময় আমার চাচি, চাচার একটা ছোটবেলার পাঞ্জাবি এনে দিলেন প্রায় ৩০ বছর আগের। সেটা পরেই চাচার সাথে ঈদের নামাজ পড়লাম। পুরনো হলেও পাঞ্জাবিটা খুব সুন্দর ছিল, আমার  আর এই জামা খুলতে ইচ্ছে হয়নি সেদিন। চাচার পুরাতন পাঞ্জাবি পরেই ঈদ করলাম। প্রায় ১৫ বছর পর আমি জেনেছিলাম ওইটা আসলে নতুন পাঞ্জাবি ছিল। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম বলে চাচা সকালে কিনে এনেছেন। এটা জীবনে আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না। 

কায়েশ আরজু

প্রতিবছর আমি আমার মায়ের সাথে ঈদ করি বলি চট্টগ্রামে চলে আসি এবং  আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করি। তাদের সাথেও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি।

ছোটবেলার ঈদের আলাদা একটা মজা আছে। সালামি নিয়ে সবার মতো আমিও অনেক আগ্রহী ছিলাম। এলাকার বন্ধুরা মিলে একটা তালিকা করতাম কার কাছে সালামি পাওয়া যায়। ঈদের দিনটাকে মনে হতো সালামির দিন। সারাদিন টাকা জমিয়ে সন্ধ্যায় গোনা শুরু হতো কে কত টাকা পেয়েছে। অনেক খুচরা টাকা এক সঙ্গে দেখতেও ভালো লাগে। ছোটবেলায় ঈদের সারাদিনই সালামির জন্য খরচ করতাম।

আমাদের এলাকার বন্ধুরা মিলে আল্পনা আঁকতাম। কারো বাড়িতে জন্মদিন, বিয়ে, বা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাদের ডাক পড়ত। ২০০৪ সালের ঘটনা, একটা অনুষ্ঠানের আলপনা আঁকার কাজ করলাম ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে। সেখানে আমাদের লাভ হয়েছিল প্রায় অর্ধেক। আমার ভাগের টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একটি শাড়ি কিনেছিলাম। কি যে আনন্দ পেয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারব না। বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন যে কারণে বাবাকে কোনোদিন কিছু গিফট করতে পারিনি।