স্ত্রীর অধিকার পেতে চাই : মিলা
যৌতুকের দাবিতে সংগীতশিল্পী মিলাকে নির্যাতনের অভিযোগে তাঁর স্বামী পাইলট পারভেজ সানজারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৫ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছিলেন মিলা। এখনো মামলা চলছে। সম্প্রতি মিলা তাঁর ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন।
এনটিভি অনলাইন : বিয়ের আগে আপনি সানজারির সঙ্গে ১০ বছর প্রেম করেছেন। তখন তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল?
মিলা : সম্পর্ক ভালো ছিল। তবে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্যও হতো। বিয়ের আগেও সাত বছর ধরে মানসিকভাবে আমি সানজারি কর্তৃক নানাভাবে অত্যাচারিত হতাম। তাঁর সঙ্গে মেয়েঘটিত অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের ঝামেলা হতো। আমি মানতে পারতাম না।
এনটিভি অনলাইন : তাহলে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
মিলা : সানজারি ঠান্ডা মাথার চালাক একজন মানুষ। আমি যখন তাঁকে বলতে যেতাম, ‘তুমি কেন এমন করছ?’ প্রতি উত্তরে সে বলত, ‘তুমি আমাকে সন্দেহ করো?’ এ কথা বলেই প্রায় সানজারি গায়েব হতো। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখত না। কখনো কখনো এ রকম তিন-চার মাস টানা করত। আমাকে মানসিকভাবে শাস্তি দিত। আমি তখন ভাবতাম, এটা আমার দোষ ছিল। আমি হয়তো শুধু শুধু তাঁকে সন্দেহ করেছি। এর পরে তো আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পর সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়। সত্যি কথা বলতে, সানজারির জন্য আমার ক্যারিয়ারেও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনি কিন্তু আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়া নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। কখন মামলা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন?
মিলা : স্বামীর পরকীয়া কিন্তু কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারে না। তবে এটা সত্যি, আমার মামলার মূল ইস্যু হলো নারী নির্যাতন। আমি নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার সঙ্গে সানজারির ১১ বছরের নানা ঘটনায় আমি মর্মাহত। চেষ্টা করেও নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। তাই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার কাছে সানজারির পরিবার সরাসরি নয়, কিন্তু ইনিয়ে-বিনিয়ে নানাভাবে যৌতুক চাইত। সানজারির আম্মুকে বিভিন্ন ইস্যুতে আমি টাকা দিতাম। চাকরি করার জন্য টাকা লাগবে বলেও সানজারি আমার কাছে নানাভাবে টাকা আদায় করত। আমি ওকে অনেক টাকা দিয়েছি। আমার যখন কাছের মানুষদের টাকা দিই, তখন কোনো প্রমাণ রাখি না। আমার কাছেও টাকা দেওয়ার অনেক ঘটনার প্রমাণ নেই। সানজারির যখন বিমানবালার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের খবর আমি পাই, তখন আমি তাঁর বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সানজারিকে তাদের বোঝাতে বলি, যেন সে এই পথ থেকে ফিরে আসে। কিন্তু তখন তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা বলেছিল, এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। আমি এখনো সানজারির স্ত্রী। কিন্তু এখন আমাদের পারিবারিক বিষয়ে কেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সবাই মাথা ঘামাচ্ছে। আদালতে সানজারির সঙ্গে নয়, যেন আমাকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের আইনজীবীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। সানজারি আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে। এত দিনে তাঁর তো চাকরি চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনা উল্টো হচ্ছে। মামলার এখনো শুনানি হয়নি, অথচ তাঁকে জামিনে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এনটিভি অনলাইন : মামলা করার পর আপনার স্বামীর সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছে?
মিলা : হ্যাঁ, আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁকে দেখা করে বলেছি, ‘তুমি যদি ভদ্র হও, ভালোভাবে সংসার করো, তাহলে আমি মামলা তুলে নেব।’ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুজন অফিসার আমাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার নানা চেষ্টা করছে। ওই দুজন অফিসার আমার স্বামীর বন্ধু ও সহকর্মী। আমি তাঁদের কথাও আমার স্বামীকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রতি উত্তরে সানজারি আমাকে বলেছিল, আমি এখানে পাঁচ বছর থাকব না। এখান থেকে আগে বের হই। তারপর দেখো আমি কী করি?’
তবে আমি মামলা ছাড়ব না। এখন আমার যুদ্ধ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে করতে হচ্ছে। তারা সানজারিকে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো, কেন তারা এটা চেষ্টা করছে?
এনটিভি অনলাইন : আপনি কি এখন শঙ্কিত?
মিলা : হ্যাঁ। আমি রাস্তা দিয়ে বের হলে যেকোনো সময় আমাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে। কারণ, সানজারির কোম্পানি থেকে আমাকে বারবার মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সানজারি শারীরিক নির্যাতনও করেছে। আমার গলায় সানজারি চাপ দিয়ে ধরেছিল। সেটার প্রমাণও আছে। যে মেয়েটার সঙ্গে সে পরকীয়া করত, তার ছবিও কিছুদিন আগে ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়েছে। আমার গায়ে সানজারি হাত তুলেছে, সেটাও প্রমাণিত।
এনটিভি অনলাইন : আপনার চাওয়া এখন কী?
মিলা : আমি এখনো সানজারির স্ত্রী আছি। আমি স্ত্রীর অধিকার পেতে চাই। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত এখনো আমি নিইনি। তবে স্বামী হিসেবে সানজারিকে শাস্তি পেতে হবে। আমি সুন্দর একটা সকালের অপেক্ষা করছি।