মায়ের জন্য ‘হৈমন্তী’ হলে গিয়ে দেখেছি : ঝিলিক

Looks like you've blocked notifications!
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিথি বসু। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

‘আমার আর কষ্টের অভিনয় করতে ভালো লাগে না। আর কাঁদতেও ভালো লাগে না।’ সাক্ষাৎকারের শুরুতে কথাগুলো বললেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিথি বসু। বাংলাদেশ ও কলকাতায় ঝিলিক নামেই তিনি পরিচিত। ভারতীয় চ্যানেল স্টাল জলসার ‘মা’ সিরিয়ালে ঝিলিক চরিত্রে অভিনয় করা তিথিকে ভুলতে পারেননি এখনো অসংখ্য দর্শক। বাংলাদেশের ডায়েল রহমান পরিচালিত ‘হৈমন্তী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিথি।ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। ‘হৈমন্তী’ প্রচারের জন্য ঝিলিক এখন আছেন ঢাকায়। ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য বিষয় এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিথি। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।

এনটিভি অনলাইন : শিশুশিল্পী হিসেবে অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সিরিয়ালেও আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। ‘হৈমন্তী’ ছবির শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

তিথি বসু : শুটিং করতে খুব ভালো লেগেছে। নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। বাংলাদেশে প্রথম শুটিং করেছি। শুটিংয়ের স্মৃতি আমার সারাজীবন মনে থাকবে। ২০১৬ সালে ঈদের আগে আমরা শুটিং করেছিলাম। তখন রমজান মাস ছিল। সন্ধ্যায় সবাই ইফতার করতেন। আমিও সবার সঙ্গে ইফতার করেছিলাম। সত্যি বলতে, ইফতার সম্পর্কে আমার প্রথম ধারণা হয়েছে বাংলাদেশে এসেই। এর আগে আমি কখনো ইফতার করিনি। ‘হৈমন্তী’ ছবিতে অনেক কাঁদতে হয়েছিল আমাকে। অনেক দুঃখের অভিনয় করেছি এখন আর চাই না। আসলে আমি কষ্ট সহ্য করতে পারি না।

এনটিভি অনলাইন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ গল্পটি আপনি কবে পড়েছেন?

তিথি বসু : যখন আসলে ছবিটিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পাই তখনই পড়া হয়েছিল। আমার বয়স তখন ছিল ১৫। গল্পটা পড়ে খুব ভালো লেগেছিল আমার। সিনেমার শুটিং করতেও দারুণ লেগেছিল। তবে বড় পর্দায় যখন ছবিটি দেখেছি তখন কষ্ট পেয়েছি। জীবন আসলে আনন্দময়। গল্পের একটিা চরিত্রের কষ্ট দেখতেও ভালো লাগে না।

এনটিভি অনলাইন : ছবির গল্পে ‘হৈমন্তী’ অনেক প্রকৃতিপ্রেমী থাকে। বাস্তবেও হৈমন্তীর সঙ্গে আপনার মিল কি খুঁজে পান?

তিথি বসু : কিছুটা পাই। আমিও হৈমন্তীর মতো বৃষ্টি পছন্দ করি। আমারও পাখিদের প্রতি অনেক মমতা কাজ করে। কুকুর ও বিড়াল আমার অনেক পছন্দ।

এনটিভি অনলাইন : ছবির কোনো দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করতে আপনার বেশি ভালো লেগেছে?

তিথি বসু : বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করে আমি অনেক মজা পেয়েছি। এ ছাড়া ছবিটিতে বাবা-মেয়ের মিষ্টি একটি সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। এই দৃশ্যগুলোর অভিনয় করতে খুব ভালো লেগেছে আমার।

এনটিভি অনলাইন : ছবিতে আপনার মা মন্দিরা শ্বাশুড়ি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নিজের মায়ের সঙ্গে অভিনয়ের রসায়ন কেমন ছিল?

তিথি বসু : খুব এক্সাইটিং। অভিনয়ের শুরুতে মা বলেছিলেন, ‘আমি পারব না। আমাকে দিয়ে অভিনয় হবে না।’ আসলে মায়ের জন্য ‘হৈমন্তী’ হলে গিয়ে আমি দেখেছি। নিজেকে বড় পর্দায় দেখার জন্য আমি ছবির প্রিমিয়ারে যাইনি। বড় পর্দায় মাকে দেখতে কেমন লাগবে এটা দেখার জন্য আমি খুব অস্থির ছিলাম। মা বাস্তবে যেমন তার পুরো উল্টো অভিনয় এখানে করেছেন তিনি। আমার কিন্তু মায়ের অভিনয় দেখতে খুব ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের হলে ছবি দেখার অভিজ্ঞতাও খুব ভালো ছিল।

এনটিভি অনলাইন : আপনার অভিনীত ‘মা’ সিরিয়াল অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল। তখন আপনার মা আপনার অভিনয় দেখে কি মন্তব্য করতেন?

তিথি বসু : মা আমাকে বলতেন, ‘তিথি, তোর মা বেঁচে আছে। তারপরও তুই মায়ের জন্য এত কাঁদিস কীভাবে? সারাক্ষণ বলিস, আমার মা নেই, আমার মা নেই।(হাসি)।’ মা আসলে মাঝে মাঝে বাস্তবের সঙ্গে মিশে যেতেন। সিরিয়ালের শুটিংয়ে মা আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

এনটিভি অনলাইন : ‘মা’ সিরিয়ালে অভিনয়ের প্রস্তাব কীভাবে পেয়েছিলেন?

তিথি বসু : আমি যখন শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় করি তখন এই সিরিয়ালের চিত্রনাট্যকার শাহানাজ দত্ত আমাকে প্রস্তাব দেন ‘মা’ সিরিয়ালে অভিনয় করার। তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। শাহানাজ দত্ত যখন চিত্রনাট্য লিখেছেন তখন নাকি তিনি আমাকে ভেবেই চিত্রনাট্য সাজিয়েছিলেন। এটা জেনে খুব রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম আমি।

এনটিভি অনলাইন : নতুন কোনো সিরিয়ালে আপনাকে এখন দেখা যাচ্ছে না কেন?

তিথি বসু : ‘মা’ সিরিয়াল করার পরে অনেক সিরিয়ালের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজের ব্যস্ততায় আর করা হয়নি। তবে এখন ভালো প্রস্তাব পেলে ভেবে দেখব।

এনটিভি অনলাইন : আপনার পড়াশোনার কী খবর?

তিথি বসু : খুব ভালো চলছে। আমি এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছি। সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা। আশা করছি, ফাইনাল পরীক্ষার পর অনেক কাজ করতে পারব।

এনটিভি অনলাইন : ‘মা’ সিরিয়ালে অভিনয়ের পর আপনাকে সবাই ঝিলিক বলে ডাকে। এখন যদি আপনাকে সবাই ‘হৈমন্তী’ বলে সম্বোধন করে, আপনার কেমন লাগবে?

তিথি বসু : ভালোই লাগবে। অভিনেত্রী হিসেবে এটা এক ধরনের প্রাপ্তি।

এনটিভি অনলাইন : অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি আর কী হতে ইচ্ছে করে?

তিথি বসু : মনোচিকিৎসক হতে চাই। আর অভিনয় চালিয়ে যেতে চাই নিয়মিত।

এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে আপনার অনেক ভক্ত। তাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কি?

তিথি বসু : এখানকার মানুষের এত ভালোবাসা পেয়েছি যে বাংলাদেশ আর অন্য দেশ মনে হয় না। কলকাতায় দর্শক যেভাবে আমাকে গ্রহণ করেছেন এখানেও তাই। বাংলাদেশি দর্শকের উচ্ছ্বাস আমাকে আনন্দ দেয়। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার মা ও বাবা দুজনের পরিবার আগে বাংলাদেশে ছিল। আমার মা সিলেটের আর বাবা বরিশালের।

এনটিভি অনলাইন : এখানকার কোন খাবারগুলো আপনার বেশি ভালো লাগে?

তিথি বসু : শুঁটকি মাছ ও চিতল মাছ খেতে ভীষণ ভালো লাগে আমার। কলকাতাতেও শুঁটকি মাছ আমি অনেক খাই।

এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের নাটক কিংবা চলচ্চিত্র দেখা হয় কি?

তিথি বসু : চলচ্চিত্র তেমন দেখা হয়নি। ইউটিউবে অনেক নাটক দেখছি। এ ছাড়া আমি বাংলাদেশের অভিনেতা সালমান মুক্তাদিরের অনেক ভক্ত। ইউটিউবে তাঁর বানানো ভিডিও আমি নিয়মিত দেখি। কোনটাই মিস করি না। সালমান মানুষকে অনেক হাসাতে পারেন। তাঁর ‘ম্যারিড কাপল’ ভিডিওটি দেখে খুব মজা পেয়েছিলাম আমি।

এনটিভি অনলাইন : কখনো সালমানের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলে কী করবেন?

তিথি বসু : অবশ্যই করব। আমি সালমানের সঙ্গে আসলেই কাজ করতে চাই।

এনটিভি অনলাইন : ‘হৈমন্তী’র পর বাংলাদেশের আর কোনো চলচ্চিত্রে আপনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন কি?

তিথি বসু : কথাবার্তা হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়! এর মধ্যে বিজ্ঞাপন করারও প্রস্তাব পেয়েছি।

এনটিভি অনলাইন : বিভিন্ন ছবিতে আপনি শিশুশিল্পী হিসেবে প্রসেনজিৎ, মিঠুন চক্রবর্তী ও তাপস পালের মতো শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। অভিনয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

তিথি বসু : আমি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করতে চাই। সেটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র হতে পারে কিংবা কলকাতার চলচ্চিত্রেও। আর্ট ফিল্ম ও ভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রেও কাজ করতে আমার আপত্তি নেই। নতুন নতুন ছবিতে অভিনয় করে নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চাই। কলকাতা ও বাংলাদেশের দর্শকের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। সবার মনে আরো দাগ কাটতে চাই। অভিনয় দিয়ে সবাইকে আনন্দ দিতে চাই বেশি বেশি।