মুখ খুললেন গাজী রাকায়েত

Looks like you've blocked notifications!

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এক নারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে অভিনেতা ও পরিচালক গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পরে মামলা করা হয়। গাজী রাকায়েতও এ ঘটনায় অভিযোগকারীর এক বন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনার ঝড় ওঠে, শাহবাগে গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও হয়। তবে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। আর এটি নিয়ে গাজী তাঁর ব্যবহৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন :  

“ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আমার অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করেছে অন্য কেউ, যা আমি ৬ মার্চ তারিখেই আমার ফেসবুকের মূল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানাই আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. নাজমুল ইসলামের কাছ থেকে জানতে পারি, আমার আইডিতে সন্দেহজনক আইপির মুভমেন্ট পাওয়া গেছে। তিনি জানান, ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উক্ত আইডিগুলো সিঙ্গাপুরের। আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটকে যে তারা দ্রুত সময়ে তদন্তটি সম্পন্ন করতে পেরেছে। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, সিঙ্গাপুর পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহায়তায় অপরাধী শনাক্ত করা হবে। অপরাজিতা সংগীতা, কানিজ ফাতেমা সুমাইয়া এবং আমার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করার একটি চুক্তি হয়। আমাদের মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণাটি নিম্নরূপ :

অপরাজিতা সংগীতার নামে গাজী রাকায়েত হোসেন কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং গাজী রাকায়েত হোসেনের অভিযুক্ত ফেসবুক আইডির দায়মুক্তি এবং 'গাজী রাকায়েত কুটু' ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে কানিজ ফাতেমা সুমাইয়া কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণা—

আমি গাজী রাকায়েত হোসেন এই মর্মে ঘোষণা করছি যে :

আমার ‘গাজী রাকায়েত কুটু’ ফেসবুক আইডি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে আমার অজান্তে কে বা কারা জনৈক কানিজকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো ও তৎপরবর্তীতে সে মেসেজের স্ক্রিনশট অপরাজিতা সংগীতা কর্তৃক তার ফেসবুকে প্রকাশ করলে সংক্ষুব্ধ হয়ে আমি বিগত ১৬/৩/২০১৮ তারিখে তার (অপরাজিতা সংগীতা) বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আদাবর থানায় মামলা করি, যার নাম্বার ১৮। পরে জানতে পারি যে মামলাটি ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (সংশোধনী২০১৩)-এর ৫৭(২) ধারায় লিপিবদ্ধ হয়েছে, যা কোনোভাবেই আমার অভিপ্রায় ছিল না। তাই আমি নিঃশর্তভাবে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ঘোষণা দিলাম।

আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমার অভিযুক্ত ফেসবুক আইডি থেকে আমি কাউকে কোনো অশ্লীল মেসেজ পাঠাইনি। কে বা কারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা হ্যাক করে আমার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে এ ধরনের আপত্তিকর মেসেজ পাঠিয়েছে। তার পরেও যেহেতু আমার নামীয় আইডি থেকেই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমি কানিজ ফাতেমা সুমাইয়ার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।

আমি অপরাজিতা সংগীতা, এই মর্মে ঘোষণা করছি যে :

‘গাজী রাকায়েত কুটু’ ফেসবুক আইডি থেকে আমার বন্ধু কানিজ ফাতেমা সুমাইয়াকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার স্বার্থে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই সেই আপত্তিকর মেসেজের স্ক্রিনশট আমার ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করেছিলাম, ব্যক্তি গাজী রাকায়েত হোসেনকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ হয়ে গাজী রাকায়েত হোসেন আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তীতে তিনি জানান, ৫৭(২) ধারায় মামলা করা কোনোভাবেই তাঁর (গাজী রাকায়েত হোসেন) অভিপ্রায় ছিল না এবং যেহেতু গাজী রাকায়েত হোসেন আমার বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (সংশোধনী ২০১৩)-এর ৫৭(২) ধারায় করা মামলাটি (আদাবর থানা, মামলা নাম্বার-১৮/১৬ মার্চ ২০১৮) নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যেহেতু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, গাজী রাকায়েত হোসেন-এর ওই ফেসবুক আইডি ঘটনার সময় তাঁর (গাজী রাকায়েত হোসেন) নিয়ন্ত্রণে ছিল না, সেহেতু ব্যক্তিগতভাবে তাকে দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই।

জনাব গাজী রাকায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে আমার আর কোনো অভিযোগ নাই এবং আমার পোস্টের কারণে তিনি কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

আমি কানিজ ফাতেমা সুমাইয়া এই মর্মে ঘোষণা করছি যে :

‘গাজী রাকায়াত কুটু’ ফেসবুক আইডি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে আমার ফেসবুক মেসেঞ্জারে আপত্তিকর মেসেজ পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে সংক্ষুব্ধ হয়ে আমি আমার বন্ধু অপরাজিতা সংগীতাকে ফেসবুকে স্ক্রিনশট প্রকাশ করে সত্য অনুসন্ধানের অনুরোধ করি। আমার পক্ষে ফেসবুকে উক্ত পোস্ট দেওয়ায় আমার বন্ধু অপরাজিতা সংগীতার বিরুদ্ধে গাজী রাকায়েত হোসেন আদাবর থানায় মামলা দায়ের করেন (নাম্বার-১৮/১৬ মার্চ ২০১৮) এবং বিগত ২২/৩/২০১৮ তারিখে গাজী রাকায়েত হোসেন ওরফে 'গাজী রাকায়েত কুটু' ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শ্যামপুর থানায় আমি মামলা করি, যার নাম্বার ২৬। যেহেতু গাজী রাকায়েত হোসেন অপরাজিতা সংগীতার বিরুদ্ধে করা মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, গাজী রাকায়েত হোসেন-এর ওই ফেসবুক আইডি ঘটনার সময় তাঁর (গাজী রাকায়েত হোসেন) নিয়ন্ত্রণে ছিল না এবং এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিনি (গাজী রাকায়েত হোসেন) আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তাই আমি নিঃশর্তভাবে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ঘোষণা দিলাম।
আমরা, গাজী রাকায়েত হোসেন, অপরাজিতা সংগীতা এবং কানিজ ফাতেমা সুমাইয়া; সকলেই এই বিষয়ে আমাদের অভিযোগ/মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করার/তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। পরবর্তীতে কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো মাধ্যমেই বিরূপ মন্তব্য/আচরণ করব না এবং কোনো অভিযোগ বা মামলা করব না বলেও একে অপরকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।”